আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ সব ধরনের গৃহস্থালি পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ হয়েছে। ভ্যাট দ্বিগুণ করার ফলে ভোক্তাপর্যায়ে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের খরচ বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যে মোট করভার ৩৭ শতাংশ থেকে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। ভ্যাটের হার না কমালে ৫ থেকে ১০ টাকায় প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, খেলনাসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য কিনতে পারবেন না ক্রেতারা। ভ্যাটের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। এ জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইএ।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খেলনাশিল্পে সব মিলিয়ে ৮৭ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর আদায় করা হচ্ছে। এটা কমানোর দাবি করছি। খাতটি উদীয়মান শিল্প, এখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে।
গত দেড় বছরে প্লাস্টিক খাতের ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বা বন্ধের পথে রয়েছে জানিয়ে সামিম আহমেদ বলেছেন, জ্বালানিসংকট, সুদের হার বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার ও গৃহস্থালি সামগ্রীর ওপর ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমরা তা থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানাই।
বিপিজিএমইএর অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা, কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা প্রদান, প্লাস্টিক শিল্পে কর অবকাশ প্রদান, শিল্প পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতের প্রদেয় আগাম আয়কর প্রত্যাহার ইত্যাদি।
বিপিজিএমইএর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় শতভাগ পূরণ করতে পারছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্লাস্টিক খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আরএফএল, গাজী, বেঙ্গল, ওয়ালটন, আকিজ, তানিন ইত্যাদি। অন্যদিকে ওয়ালমার্ট, টেসকো, জারার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বর্তমানে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রেতা। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। প্লাস্টিক শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যেখানে কর্মসংস্থান হচ্ছে ১৫ লাখ মানুষের।
জানতে চাইলে বিপিজিএমইএর সেক্রেটারি ওয়ারেস সর্দার বলেন, প্লাস্টিকের গৃহস্থালিপণ্য যেগুলো গৃহিণীরা ব্যবহার করেন, সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে ভ্যাট দ্বিগুণ হলে। মধ্য ও নিম্নবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এ জন্য আমরা ভ্যাটের হার কমানোর দাবি করছি।
আমান প্লাস্টিকের হেড অব ব্র্যান্ড মার্কেটিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট মো. আলমগীর হোসেন বলেন, খুবই কম দামে ক্রেতারা তাদের সন্তানদের প্লাস্টিকের খেলনা কিনে দিতে পারছেন। ভ্যাট বাড়লে এটা আর সম্ভব হবে না। খেলনা অনেক প্রাইজ সেনসেটিভ একটা পণ্য। এর দাম সামান্য বাড়লে আমরা দেশীয় বাজার হারাবো। তখন চীন ও অন্যান্য দেশের খেলনা বাজারে সয়লাব হয়ে যাবে। সম্ভাবনাময় দেশীয় প্লাস্টিক শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।