প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সীমান্তে লোকজনকে জোর করে ঠেলে (পুশ ইন) বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। শুধু গত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ২৫ দিনেই এক হাজার ২২১ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ। এজন্য সীমান্তবর্তী ১৮ জেলাকে বেছে নিয়েছে তারা। সবচেয়ে বেশি পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিন সীমান্ত দিয়ে।
তবে বিএসএফের পুশ ইনের পর আলোচনায় আসে বাংলাদেশে অবস্থান করা ‘অবৈধ ভারতীয়দের’ ফেরত পাঠানো বা পুশ ব্যাকের বিষয়ে। এরই মধ্যে অবৈধ ভারতীয়দের পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ভারত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সীমান্ত দিয়ে জোর করে লোকজনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করছে। বাংলাদেশে যেসব অবৈধ ভারতীয় অবস্থান করছে তাদের যথাযথ নিয়ম মেনে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে।
ভারত যাদের পুশ ইন করেছে তাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের শরীরে নিষ্ঠুরতার ছাপ ফুটে উঠেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ভারতের বিএসএফকে বারবার পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে পুশ ইন বন্ধ করার তাগিদ দিলেও তারা শুনছে না, পুশ ইন করেই চলেছে।
বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ। এ রকম ২৬টি সীমান্ত এলাকাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিজিবি। ওই সব এলাকায় টহল জোরদার, সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়দের যুক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পুশ ইনের ব্যাপারে অফিসিয়ালভাবে জানানোর পরেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। পুশ ইন থামানো না গেলে ভারত আরও উৎসাহিত হয়ে পুশ ইন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সংকট আরও গভীর হতে পারে। বিশেষ করে অতীতে আসামের কথিত অবৈধ বাংলাদেশি নিয়ে ভারত সরকারের যে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে, সেটি আবারও শুরু হতে পারে। অতীতে তাদের প্রশাসনের করা মনগড়া তালিকা ধরে সেখানকার বাঙালিদের পুশ ইনের অপতৎপরতা শুরু হতে পারে। পুশ ইন বন্ধে প্রয়োজনে কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। এতেও কাজ না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক আলোচনায় পুশ ইন না থামায় আরও হার্ডলাইনে যাবে বাংলাদেশ। এজন্য ১ জুন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ ভারতীয়দের পুশ ব্যাক শুরু করেছে বাংলাদেশ।