রাজনীতি প্রতিবেদক :
সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবে একমত হলেও সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের সুপারিশের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে বোধ হয় এখন আমাদের বিবেচনা করা ঠিক হবে না।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে চতুর্থদিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সালাউদ্দিন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে এই কমিশন, যার নেতৃত্বে আছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০, নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে।
আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট আসন হবে ৫০৫টি।
এরমধ্যে মঙ্গলবারের বৈঠকে ১০০ সংরক্ষিত নারী আসন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদসহ পাঁচটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’ পৌঁছেছে বলে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন বলেন, "আমাদের দলের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ধারণা এইজন্য দিয়েছিলাম যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদ, সমাজ বিজ্ঞানী, রাষ্ট্র বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন সেক্টরে যাদের অবদান আছে, যাদের চিন্তাধারা, অবদান জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তাদেরকে প্রতিনিধি আকারে এখানে যুক্ত করার জন্যই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বিবেচনা করেছিলাম।
“আমারা উচ্চকক্ষের ক্ষেত্রে সরাসরি ভোটের কথাও বলি নাই। সর্বদিক বিবেচনায় আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতিটা এখানে সঠিক হবে না।"
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংসদ সদস্যদের গোপন ভোটের পক্ষে বিএনপি।
এবিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেক্টোরোল পদ্ধতির বিষয়ের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন, এর মধ্যে বেশি মতামত এসেছে উচ্চকক্ষ-নিম্ন কক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালাটের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার। এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
“তবে সবগুলো রাজনৈতিক দল গোপন ভোটের পক্ষে একমত হলে তাতে একমত বিএনপি।"
একজন ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকার সুযোগ বন্ধের প্রস্তাবের বিষয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত হলেও বিএনপি তাতে রাজি নয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “টানা দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গ্যাপ দিয়ে পরেরবার আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে এমন প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, "গত তিন দিনের আলোচনায় ৭০ অনুচ্ছেদ (ফ্লোর ক্রসিং) সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্তে আসা গেলেও স্থায়ী কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। নারী আসন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনা হবে।"
