জাতীয় প্রতিবেদক :
পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ভোর থেকেই ছুটে চলেন এক দল আলেম। পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত হলে সেগুলো জবাই করছেন তারা। অধিকাংশই তাদের মাদরাসার জন্য কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, তারা অলিগলিতে না থাকলে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন দিয়ে পশু জবাই করতে হলে সিরিয়াল ধরা লাগতো। তারা আমাদের প্রয়োজনের বিষয়টি সহজেই সেরে দিচ্ছেন। আমরা তাদের কতটুকু মূল্যায়ন করছি, ভেবেছি?
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম। কোরবানির চামড়া কী করবেন, জানতে চাইলে মূলত কথার সূত্রপাত।
দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, চামড়ার যে দাম। বিক্রি করে ৫০০-৬০০ টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা নিয়ে কাকে কত দেবো? কেউ সন্তুষ্ট হবে না। অথচ মাদরাসায় দিয়ে দিলে তারা জায়গা মতো (আড়ত) নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারবে। তাতে আমারই তো লাভ হলো, বেশি টাকা দানের সওয়াব পেলাম। পাশাপাশি এই টাকায় মাদরাসাটা চলবে।
একটা বিষয় কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই যে গরু শোয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একজন এসে জবাই করে দিলেন। আমরা তো ঠিকমতো তাদের জবাইয়ের টাকাটাও দেই না। তারা চানও না। কিন্তু যদি তারা অলি-গলিতে না থাকতেন তাহলে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের ওপর নির্ভর করতে হতো। তারা দুই তিনজন মানুষ একটা এলাকায় কয়টা গরু জবাই করতে পারতেন!
এমন চিন্তা থেকেই কোরবানির পশুর চামড়া দানের সবচেয়ে সহজ ও সঠিক জায়গা মাদরাসা বলে মনে করেন আবুল কালাম। শুধু আবুল কালাম নন, দেশের অনেকেই কোরবানির পশুর চামড়া মাদরাসায় দিয়ে থাকেন।
দক্ষিণ পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাসানুল আমীন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কেনেন। তালতলার জামিয়াতুল হাসান আল ইসলামিয়া (মাদরাসা ও এতিমখানা) মাদরাসায় কোরবানির গরুর চামড়া দান করেছেন তিনি। মিডিয়াকে হাসানুল আমীন বলেন, আমরা সব সময় মাদরাসায় চামড়া দেই। যথারীতি এবারও দিলাম। তবে দামের বিষয়ে জানি না।
একই এলাকার মেজর মনজুর কোরবানির গরু কেনেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তার গরুর চামড়াও তালতলার ওই মাদরাসায় দান করেছেন।
শেওড়াপাড়া শাপলা সরণির বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ আবুল কালাম বাসার সামনের জামিয়া সাহবানিয়া মাদরাসায় দিয়েছেন কোরবানির গরুর চামড়া। মিডিয়াকে তিনি বলেন, মাদরাসায় চামড়া দিয়েছি। যা পায় (বিক্রি করে যে টাকা আসে) তাদের কাজে লাগবে। আমি বিক্রি করতে গেলে যে কিনবে সে লাভ করবে, আবার তার থেকে ট্যানারি পর্যন্ত যেতে লাভ করবে। এর চেয়ে মাদরাসায় দিয়েছি, তারা সরাসরি বিক্রি করে ভালো দাম পাবে।