রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিত্যক্ত দুটি কক্ষ ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতা দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের দুটি কক্ষ দখল করে সেখানে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
অভিযুক্ত রাজশাহী মহানগর বিএনপির মতিহার থানা শাখার সভাপতি মো. একরাম আলী। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাসখানেক ধরে সন্ধ্যার পর তাকে ওই কক্ষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে চা খেতে এবং বৈঠক করতে দেখা গেছে। কক্ষ দুটি রং করে নতুন দরজা লাগানো হয়েছে, বসানো হয়েছে চেয়ার-টেবিলও। তবে কক্ষের বাইরে নেই কোনো অফিস বোর্ড বা দলীয় ব্যানার। ভেতরের কার্যক্রম ঘিরেই মূলত জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি স্থাপনায় কীভাবে এই ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে কক্ষটি অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের উত্তর পাশে স্টেশনবাজার এলাকায়। এলাকাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আবাসিক অঞ্চল হলেও আশপাশে রয়েছে জনবসতি, দোকানপাট ও একাধিক চায়ের স্টল।
বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায় থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনটি বহু বছর ধরেই কার্যত অব্যবহৃত। মাঝে মাঝে কিছু লোকাল ট্রেন থামে। তবে নিয়মিত যাত্রী চলাচল নেই। রেলওয়ের নিরাপত্তা বা পরিচালনাধীন কোনো কর্মীও এ স্টেশনে সাধারণত উপস্থিত থাকেন না।
এই অব্যবস্থার সুযোগেই কক্ষ ‘দখল’ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তারা বলছে, ‘জুলাই মাসে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের’ পর একরাম আলীর নেতৃত্বে বিএনপির কর্মীরা কক্ষটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। পরিত্যক্ত ও অপরিষ্কার অবস্থা থেকে কক্ষটি পরিষ্কার করা হয়, দেয়ালে রঙিন রং করা হয়, বসানো হয় চেয়ার ও টেবিল। এরপর থেকেই সেখানে নিয়মিত সন্ধ্যায় বসছেন নেতাকর্মীরা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারি স্থাপনা ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন একরাম আলী। তিনি বলেন, ওই কক্ষটি বহুদিন ধরে পড়ে ছিল জরাজীর্ণ অবস্থায়। এখানে মাদক সেবন, অসামাজিক কাজ হতো। আমি জনগণের স্বার্থে জায়গাটা পরিষ্কার করে ব্যবহারযোগ্য করেছি। কেউ এখানে দখল করেনি।
তিনি আরও বলেন, এখানে এখন মানুষ চা খায়, আড্ডা দেয়। আমি এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাই এটা ঠিক না। সবাই মিলে এখানে বসে। দরজা লাগানো, রঙ করা সবটাই করেছি যাতে জায়গাটা সুন্দর থাকে।
তবে রেলওয়ের অনুমতি নিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে একরাম আলীর বলেন, সরকারি জায়গা তো। সরকার চাইলে নিয়ে নেবে। আমার এতে কোনো অসুবিধা নেই। অনুমতি নিয়ে কী করব?
তার বক্তব্যেই স্পষ্ট, রেলওয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই ওই কক্ষে প্রবেশ ও সংস্কার করা হয়েছে। তবে এটিকে ‘দখল’ বলতে রাজি নন তিনি।
কক্ষটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ বিষয়ে স্থানীয়দের অনেকেই মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশনবাজার এলাকার একাধিক দোকানি ও বাসিন্দা বলেন, কক্ষটি অনেক দিন বন্ধ ছিল। তবে জুলাইয়ের দিকে হঠাৎ একদিন সেটি খোলা হয়। এরপর সেখানে নতুন দরজা লাগানো ও রং করার কাজ হয়। এখন নিয়মিত সন্ধ্যার দিকে কিছু মানুষ সেখানে আসেন।
স্টেশন বাজার এলাকার এক দোকানি বলেন, ‘আগে ওই জায়গায় মাদকসেবীদের আনাগোনা ছিল। এখন আর ওরা আসে না। তবে এখন যারা আসে, তারাও তো সরকারি জায়গা নিজেরা ব্যবহার করছে। এটা কতটা ঠিক, বুঝতে পারছি না।’
আরেক দোকানি বলেন, ‘একজন নেতা মাঝে মাঝে সেখানে বসেন। চেয়ারে বসেন, অন্য লোকজনও আসে। এখন দলীয় বৈঠক হয় কি না, সেটা খোলাখুলি বোঝা যায় না।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্ষটির চারপাশে কোথাও অফিস বোর্ড বা দলীয় ব্যানার নেই। তবে ভবনের দেয়ালে ‘বিএনপি’, ‘জামায়াত’ ইত্যাদি সমর্থনে একাধিক দেয়াললেখন রয়েছে।
স্থানীয় এক জামায়াত ইসলামের নেতা জানান, আমরা শুধু দেওয়াল লিখন করেছি। স্টেশন কেন দখলে নেবো? এটা সরকারি জায়গা। এটা দখলে নেওয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় এই স্টেশনের দেখভাল করে থাকে। এ ব্যাপারে কথা হলে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আগে কিছু জানতাম না।’
তিনি আরও জানান, বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কেউ সরকারি স্থাপনায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে কোনো কার্যক্রম চালিয়ে থাকে, তাহলে বিধী অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।