জহির শাহ্ , বিজয়নগর প্রতিনিধি
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর বাজার এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি ব্যস্ত অংশে গতকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখী ‘দিগন্ত লোকাল’ নামক যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, ফলে অন্তত ১০ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বাসের চালক মো. ফরিদ মিয়া (৫৫) গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, এবং তাঁর জীবন এখনো ঝুঁকির মুখে। দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে অন্য আহতদের নাম-পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে বাসে যাত্রীরা ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং সিলেট অভিমুখী যাত্রী।
সংঘর্ষের পর স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাস্তাযাত্রীরা তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজে অগ্রসর হয়ে আহতদেরকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেন। আহতদের দ্রুত পাশের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সদর হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে বাসচালক ফরিদ মিয়ার অবস্থা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথায় এবং বুকে গুরুতর আঘাত লেগেছে, এবং তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অন্য আহতদের মধ্যে কয়েকজনের হাত-পায়ে ফ্র্যাকচার এবং মাথায় আঘাতের লক্ষণ পাওয়া গেছে, যা তাদের চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে কয়েকজনকে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বা ঢাকায় স্থানান্তর করা হতে পারে।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁর বক্তব্যে, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখী দিগন্ত লোকাল বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকের চালক সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় এবং তার পরিচয় এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি।” ওসি আরও জানান, আহত সকলকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং দুর্ঘটনাকারী যানবাহন দুটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে মহাসড়কে প্রায় ৩০ মিনিট যানজট হয়, কিন্তু এখন যানচলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং প্রাথমিক তদন্তে ট্রাকের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের অসতর্কতা মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ ট্রাকচালকের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং যানবাহন দুটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চালকদের লাইসেন্স যাচাই করছে।
এই মহাসড়কটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত হাইওয়ে, যা ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে। বিজয়নগরের ইসলামপুর বাজার এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে পরিচিত, কারণ এখানে রাস্তার সংকীর্ণতা, রাতের অন্ধকার এবং অপর্যাপ্ত আলোকসজ্জা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। স্থানীয়রা উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, যার মধ্যে কয়েকজন যুবক আহতদের বাইক বা অটোরিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা এবং যাত্রী সংগঠনগুলো সড়ক নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন, যেমন এই এলাকায় ফুটওভারব্রিজ, স্পিড ব্রেকার এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, এই মহাসড়কে ২০২৫ সালে ইতিমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এই ঘটনা সড়ক নিরাপত্তার উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে, এবং স্থানীয় প্রশাসন তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলে প্রার্থনা করছেন। আরও আপডেটের জন্য স্থানীয় সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হচ্ছে।