বি-বাড়িয়া প্রতিবেদক :
বি-বাড়িয়ার নবীনগরে অধিত লাভের স্বপ্ন-প্রলোভন দেখিয়ে শান্ত রায় নামের এক ছাত্রলীগ নেতা কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নবীনগরের ইন্টারনেট মিডিয়াদে এর প্রচার হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ভূক্তভেঅগীরা উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের শান্ত রায় ও তার বাবা নির্মল রায়ের বিরুদ্ধে গেল মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত শান্ত রায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও বি-বাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
স্থানীয় জনগণ জানিয়েছে, শান্ত রাজনীতির পাশাপাশি সিগারেট ও স্বর্ণের ব্যবসা করতেন। এলাকায় প্রচলিত আছে, চট্টগ্রামে তার পিতার কয়েকটি স্বর্ণের দোকান আছে। এই ভিত্তিতে তিনি এলাকায় বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন। এরপর ব্যাংক রেটের চেয়ে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সিগারেট ও স্বর্ণের ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করে। কয়েক বছর ঠিকঠাক ভাবেই লেনদেন করেছিল শান্ত। কিন্তু গত শনিবার থেকে তিনি এলাকায় নেই। অথচ শনিবার ও রোববার অনেককে টাকা ফেরত দেয়ার কথা ছিল। তাই শুরু হয় কানাঘুষা। এরপরই বেরিয়ে আসে একের পর এক টাকা নেয়ার তথ্য।
শান্ত রায় যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েঠেন বাড়াইল গ্রামের হক সাহেব ৪০ লাখ, সুজন মিয়া ২০ লাখ, আব্বাস উদ্দিন ২০ লাখ ৬০ হাজার, সগির মিয়া ১২ লাখ, শ্যামল চন্দ্র দাস ৮ লাখ ৬০ হাজার, অক্লান্ত চন্দ্র দেবনাথ ৩ লাখ, নিলখী গ্রামের খোরশেদ আলম ৫ লাখ, থোল্লাকান্দি গ্রামের আতিকুর রহমান রনি ৩ লাখ, বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালাল ৫৩ লাখ, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবুল মিয়া ১১ লাখ, বড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমান ৩ লাখ, নরসিংদীর বাদল মিয়া ৫ লাখ টাকা।
শুধুমাত্র ব্যবসার কথা বলেই টাকা নেয়ার পর থেমে যায়নি শান্ত রায়। সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেবার কথা বলে রিফাত আহম্মেদের কাছ থেকে ৬ লাখ হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত রায়। এছাড়া বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে হাতিয়েছে ১ লাখ টাকা।
ভূক্তভোগী হক সাহেব বলেছেন, ‘শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায়ই টাকা নিতেন। আবার ফেরতও দিতেন। সর্বশেষ ৪০ লাখ নিয়েছেন। অন্য কারো কাছ থেকে টাকা নিতেন বলে আমার জানা ছিল না। এখন শুনতে পাচ্ছি, আমার মতো ৩০-৪০ জন থেকেও কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন।’
আরেক ভূক্তভোগী সুজন মিয়া বলেছেন, ‘শান্ত আমার বন্ধু। তার বাবা চট্টগ্রামে স্বর্ণ এর ব্যবসা করেন। স্বর্ণ ক্রয় করার কথা বলে কয়েক দিনের জন্য আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা গুলো আমি বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করে দিয়েছি। গত শনিবার আমার টাকা ফেরৎ দেবার কথা ছিল। কিন্তু রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ আছে।’
শ্যামল চন্দ্র দাস বলেছেন, শান্তকে বিশ্বাস করতাম বলেই আমি ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম।’
এলাকাকাসীর ধারণা, টাকা আত্নসাৎ করতে শান্ত চোরাই পথে ভারত পালিয়ে গেছে। ১৮ ফ্রেরুয়ারী তার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন দেখাচ্ছে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায়। শান্ত টাকা নেয়ার সময় ব্যাংকের চেক ও স্ট্যাস্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নিয়েছে। তবে অনেকে ডকুমেন্ট ছাড়াই বিশ্বাসের উপর টাকা দিয়েছেন।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

.jpg)