খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ২০১৮ সালে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০২৩ সালে তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৭৯ লাখ এক হাজার ১৭০ টাকা। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে তার নগদ টাকা বেড়েছে ৪১ দশমিক ৭৮ গুন। যদিও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে কমেছে। একই সময়ে আব্দুল খালেকের স্ত্রীর নগদ টাকা কমেছে প্রায় তিনগুন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা ও পূর্বের হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ টাকা দেখানো হয় ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৫ টাকা। ওই বছরে তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারের নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ২১ হাজার ৫৬০ টাকা।
২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ টাকার পরিমাণ কমে মাত্র নয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা, আর স্ত্রীর নগদ টাকা বৃদ্ধি দাঁড়ায় দুই কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ টাকা।
২০২৩ সালে মেয়র নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া তথ্য বলছে, তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে চার কোটি ৭৯ লাখ এক হাজার ১৭০ টাকা। এ সময়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৩২ হাজার ২৬৯ টাকা। অর্থাৎ, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্ত্রীর নগদ টাকা কমেছে দুই দশমিক ৯৪ গুন।
তবে, তালুকদার আব্দুল খালেকের ২০১৮ সালে চেয়ে বর্তমানে নগদ টাকা পরিমাণ প্রায় ৪২ গুন বাড়লেও স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। যদিও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের চেয়ে নগদ টাকার পরিমাণ বর্তমানে পাঁচগুন বেশি দেখানো হয়েছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক এবং তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারের বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছিল ৭০ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৮ টাকা। এর মধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেকের নিজস্ব আয় ছিল ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ২৫৫ টাকা আর স্ত্রীর ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৮ টাকা। সেখানে ২০২৩ সালে মেয়র নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা এই দুই জনের বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ২০ হাজার ৮৭০টাকা। এর মধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেকের আয় ৩০ লাখ দুই হাজার ৯৪২ টাকা এবং স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৯২৯ টাকা।
হলফনামায় বলা হয়, তালুকদার আব্দুল খালেকের চারটি ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এক কোটি ১৮ লাখ ১৩৪ টাকা, সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ এফডিআর ১৮ লাখ টাকা, তার স্ত্রীর ব্যাংকে রয়েছে ৯৫ লাখ চার হাজার ৪৭০ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৫০ লাখ টাকা।
তালুকদার আব্দুল খালেকের দুটি গাড়ির একটি লেকসাস, যার মূল্য ৪৪ লাখ ও মাইক্রো ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর স্ত্রী টয়েটা ল্যান্ড ক্রুজার রয়েছে, যার দাম ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী নামে সোনালী ব্যাংকে ঋণ দেখানো হয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৭৬ টাকা।
তালুকদার আব্দুল খালেক পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি ২৩ বিঘা, ক্রয় সূত্রে তিন দশমিক ২১ একর, অকৃষি জমি তিন কাঠা মূল্য পাঁচ লাখ ৭৯৯ টাকা, স্ত্রীর নামে থাকা রাজউক পূর্বাঞ্চল প্লটের মূল্য ২২ লাখ ৮০০ টাকা। বাড়ির দাম পাঁচ কোটি ৫০ লাখ দেখিয়ে স্ত্রী এবং নিজের ৫০ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে। এই বাড়ি ছাড়াও স্ত্রীর নামে পাঁচতলা ভবনের অর্ধেক মালিকানা দেখানো হয়েছে। যার মূল্য ৩০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া বৈবাহিক সূত্রে ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছে।
এদিকে, হলফনামায় দেখানো হয়েছে, এসবিএসি ব্যাংকে শেয়ার দুই কোটি, সঞ্চয়পত্র দশ লাখ, এফডিআর দশ লাখ ও বেসিক ব্যাংকে এফডিআর ১৮ লাখ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া তার স্ত্রী নামে সঞ্চয়পত্র ৩০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। একই সময় তালুকদার আব্দুল খালেকের গাড়ি লেকসাস ৪৪ লাখ ও মাইক্রোবাস সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে মিটসুবিসি পাজারো ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৫ টাকা। সেই সময় শুধু পৈত্রিক সূত্রে ২৩ বিঘা জমি। অকৃষি জমি তিন কাটা মূল্য পাঁচ লাখ ও দশমিক ৪৯৫ একর মূল্য ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর নামে দশমিক ৪৯৫ একর জমি মূল্য ৮৫ হাজার এবং পূর্বাঞ্চল প্লট। সেই সময় তালুকদার আব্দুল খালেকের আবাসিক বা বাণিজ্যিক প্লট ছিল না। এই হলফনামা তালুকদার আব্দুল খালেকের মৎস্য ঘেরে বিনিয়োগ ছিল দুই কোটি ছয় লাখ ৯২ হাজার ৯৯৬ টাকা এবং স্ত্রীর মৎস্য ঘেরে বিনিয়োগ ছিল এক কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। সেই সময় তালুকদার আব্দুল খালেক এবং তার স্ত্রীর নামে হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনে তিন লাখ ৬২ হাজার ৫৩২ টাকা ঋণ ছিল, যা এখন আর নেই। তালুকদার আব্দুল খালেকের মেয়র ছাড়া আয়ের প্রধানতম উৎস দেখানো হয়েছে মৎস্য খামার, ব্যাংক হতে প্রাপ্ত সুদ ।
অন্যদিকে, জাপার মেয়র পদপ্রার্থী শফিকুলের আয় বেশি। তিনি খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তাঁর বার্ষিক আয় সবচেয়ে বেশি। বছরে তাঁর আয় ৯০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে আসে এক লাখ ৮৬ হাজার এবং ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে পান ৮৮ লাখ টাকা।
শফিকুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় চার কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে এক কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় তিন কোটি টাকার এফডিআর। খুলনার মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাংকঋণেও তিনি শীর্ষে রয়েছেন। মধুমতি ব্যাংকের খুলনা শাখায় তাঁর ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাক টাকা। নিজেকে তিনি ‘স্বশিক্ষিত' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বৈধ হওয়া তিন প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. স আবদুল আউয়াল। তবে, সম্পদ ও অন্য সবকিছুতে পিছিয়ে তিনি। হলফনামায় তিনি পেশার ঘরে লিখেছেন, ‘জামি’আ রশিদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ী।
ব্যবসা ও শিক্ষকতা থেকে আবদুল আউয়ালের বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩১ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে তিন দশমিক ৫৭ শতক অকৃষিজমি। তাঁর ক্ষম নামে কোনো মামলা নেই।
আগামী ১২ জুন ইভিএমের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
