বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে হিজরি ১৪৪৬ সনের পবিত্র হজ। মিনার প্রান্তর প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী আজ একত্রিত হয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ স্লোগানে মুখরিত করেছেন পুরো অঞ্চল।
আজ বৃহস্পতিবার ৯ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা মিনায় অবস্থান করবেন। এরপর সন্ধ্যার পর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে হাজিরা, যেখানে রাত কাটিয়ে শয়তানকে পাথর মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করা হবে।
হজের অন্যতম প্রধান অংশ ‘ওকুফে আরাফা’র প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মিনায় রাত যাপনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে পরদিন ভোর থেকেই হাজিরা আরাফার ময়দানের পথে যাত্রা করবেন। আরাফা মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যেখানে তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুজদালিফায় প্রবেশ করবেন।
আরাফায় অবস্থানের সময় মুসল্লিরা মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ একযোগে আদায় করবেন।
সৌদি আরবের হজমন্ত্রী তৌফিক রাবিয়া জানিয়েছেন, এবারের হজে প্রায় ১৫ লাখ বিদেশি হাজি অংশগ্রহণ করেছেন। গরম এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি ৪০টিরও বেশি সংস্থা মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। গরম থেকে রক্ষা পেতে ৫০ হাজার বর্গমিটার ছায়াযুক্ত এলাকা তৈরি করা হয়েছে। ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিট ও প্রচুর চিকিৎসক-নার্স নিয়োজিত রয়েছে।
বার্তা সংস্থা আনাদোলুর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর হজে অংশ নিয়েছিলেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ হজযাত্রী ছিলেন ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন। বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশের মানুষ ঐ হজে অংশ নিয়েছিলেন।
এইবারের হজে ১২ বছরের নিচের শিশুদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনুমতিপত্র ছাড়াই হজে অংশ নিলে পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা এবং সৌদি আরবে প্রবেশে দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হজমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, গত বছর মৃত্যুবরণকারীদের ৮০ শতাংশই ছিলেন নিবন্ধনবিহীন। তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়, ফলে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসন ও পরিবহণ থেকে বঞ্চিত হন। মৃতের মধ্যে ছিলো বহু মিশরীয় ও ইন্দোনেশীয়।
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এই হজ। হিজরি বছরের দ্বাদশ মাসে অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় আচার প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের জন্য জীবনেও অন্তত একবার পালন করা ফরজ, যদি তাদের সক্ষমতা থাকে।
হজের শুরুতে পুরুষরা সাদা ইহরাম পরিধান করেন, নারীরা শালীন পোশাকে মাথা ঢাকা রেখে অংশ নেন। এরপর তারা তাওয়াফ, সাঈ ও মিনার অন্যান্য রীতিনীতি পালন করেন। আজ বৃহস্পতিবার আরাফার ময়দানে হাজিরা সমবেত হবেন, যেখানে মহানবী (সা.) তার বিদায় হজের খুতবা প্রদান করেছিলেন।