রাজনীতি ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে শুরু থেকেই আছেন চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার সহযোগীরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন দল করে সারাদেশ চষে বেড়ালেও তিনি এখনো সরকারেই রয়েছেন। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ জানিয়েছেন, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই উপদেষ্টা পদ ছাড়বেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) নিউইয়র্কভিত্তিক ‘ঠিকানা টিভির’ প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের টকশোতে তিনি নিজেই এই কথা জানান।
আসিফ বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে যুক্ত। রাজনীতিতে আছেন এমন কারো নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা উচিত নয়। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই আমি সরকার থেকে সরে দাঁড়াবো।’
টকশোতে একক অতিথি হিসেবে ছিলেন আসিফ। নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) আলোচনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা যায় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ইউটিউব চ্যানেলে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না বা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন কি না- এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তিনি। জুলাই আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা এই উপদেষ্টা জানান, পতাকাবাহী গাড়ি বা ক্ষমতার লোভে নয়, বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে সোচ্চার থাকতে সরকারে রয়েছেন।
আসিফ বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নসহ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। দায়িত্ব শেষ না করে গেলে ঐতিহাসিক দায় থেকে যাবে।’
আসিফ মাহমুদের অভিযোগ, একটি মহল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে এনে প্রধান বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা করছে এবং আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে জাপার হয়ে নির্বাচনে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সব দল রাজি থাকলেও বিএনপি ও তাদের সহযোগী কয়েকটি দল রাজি না থাকায় নির্বাচন করা যাচ্ছে না।’
এছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগরে সাম্প্রতিক সহিংসতা, শিক্ষক নিপীড়ন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় তার বাবা বিল্লাল হোসেন জড়িত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারকে ‘রাজনৈতিক অপপ্রচার’ দাবি করেন আসিফ মাহমুদ। এসবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও জানিয়েছেন তিনি।
মুরাদনগর থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করতে চাই। স্থানীয় স্তরে গিয়ে নির্বাচন করা আমার জন্য সুবিধাজনক হবে না। ঢাকা শহরই আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র।’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৯৮ সালে। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন কুমিল্লার মুরাদনগরে। তিনি ঢাকার তেজগাঁও থানার নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনিসহ অন্যরা মিলে সারাদেশে একযোগে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরিশেষে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফলভাবে ডাক দেন। যার ফলে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়।
আসিফ ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। এরপরে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করেন। ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তী সময়ে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আসিফের নেতৃত্বে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পদত্যাগ করে। ২০২৩ সালে ৪ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সূচনার পর সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পান তিনি।
তিনি ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান।