সম্প্রতি এক ব্যক্তি মার্কিন বিমানবাহিনীর গোপন আরএটি৫৫ বিমানকে নেভাদার এরিয়া ৫১-এর আকাশে উড়তে দেখে বিরল দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক পোস্ট। আরএটি৫৫—কে বিশ্বের সবচেয়ে গোপন বিমান হিসেবে ধর হয়।
ডেইলি মেইলের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেদনটিতে বলে হয়েছে, আলোকচিত্রী মাইকেল রোকিতা টিকাবু শৃঙ্গ থেকে ২৬ মাইল দূর থেকে ঝাপসা ফুটেজ ধারণ করেন। তাতে দেখা যায়, আরএটি৫৫ বিমাটি টাচ-অ্যান্ড-গো কৌশল অনুশীলন শেষে রানওয়ে ৩২-এ অবতরণ করে ও এরপর এরিয়া ৫১-এর সবচেয়ে বড় হ্যাঙ্গার, হ্যাঙ্গার ১৮-তে প্রবেশ করে।
এরিয়া ৫১-এর হ্যাঙ্গার ১৮ বহু বছর ধরে জল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। ধারণা করা হয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গোপন প্রকল্প পরিচালনা করে। সবচেয়ে প্রচলিত গুজব হলো—এ হ্যাঙ্গারে ভিনগ্রহী প্রযুক্তি, এমনকি বিধ্বস্ত ইউএফও ও এলিয়েন জীবনের প্রমাণ সংরক্ষণ করা হয়। একই সঙ্গে এটি শীর্ষ–গোপন মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বলেও বিশ্বাস করা হয়।
আরএটি৫৫ একটি বিশেষভাবে পরিবর্তিত বিমান, যার প্রধান কাজ হলো আকাশে উড়ন্ত স্টেলথ বিমানগুলোর রাডারসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা। এটি প্রায়ই অন্যান্য গোপন কর্মসূচির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হয়। আরএটি৫ ‘সাবরে ৯৮’ কল চিহ্ন ব্যবহার করে গোপনে কাজ করে ও কেবল সীমিত আকাশসীমায় ওড়ে, যেখানে এটি ট্র্যাকিং ডিভাইস বন্ধ করে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। বিমানটি তার স্বতন্ত্র নাক ও উঁচু পিঠের মতো গড়নের কারণে সহজেই চেনা যায়।
এর মূল দায়িত্ব হলো মাঝ আকাশে অন্যান্য বিমানের স্টেলথ ক্ষমতা পরীক্ষা করা। ধারণা করা হয়, এই গোপন কার্যক্রম আরকিউ-৮০ ড্রোনের মতো প্রকল্পকেও সহায়তা করেছে।
রোকিতা নিশ্চিত করেছেন, আরএটি৫৫-এর কল চিহ্ন সত্যিই ‘সাবরে ৯৮’, যা রহস্যময় এ জেটকে এরিয়া ৫১-এর গোপন হ্যাঙ্গার ১৮-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে। মরুভূমির কঠিন পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি একটি নিকন পি১০০০ ক্যামেরা ও নিজস্ব দুরবিন–স্মার্টফোন সেটআপ ব্যবহার করে এ রাডার–পরীক্ষামূলক বিমানটির ছবি তুলতে সক্ষম হন। আরএটি৫৫ মূলত বি-২ ও বি-২১ রেইডারের মতো বিমানের স্টেলথ ক্ষমতা পরীক্ষা করে।
এর বিরল উপস্থিতি ও এরিয়া ৫১-এর সঙ্গে সম্পর্ক পুরনো রহস্য তত্ত্বগুলোকে আরও উসকে দেয়।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এর আগে এপ্রিল মাসে এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, জেরি ফ্রিম্যান নামে এক সাংস্কৃতিক গবেষক ১৯৯৬ সালে ভুলক্রমে এরিয়া ৫১-এর সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন। তিনি আসলে হারিয়ে যাওয়া ১৮৪৯ সালের গোল্ড রাশের ডায়েরি খুঁজছিলেন, কিন্তু রাতে অচেনা কিছু আলোর ঝলকানি দেখে মনে করেছিলেন হয়তো তিনি ভিনগ্রহী মহাকাশযান দেখতে পেয়েছেন। পরে তিনি ইউএফও গবেষক জর্জ ন্যাপকে এ অভিজ্ঞতার কথা জানান।
ফ্রিম্যান বলেন, ‘দিনে জায়গাটা শুকনো লেকের মতোই লাগছিল, কিন্তু রাতে ভিন্ন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম চারপাশে নিরাপত্তা আলোর ব্যারিকেড ও লেকের মাঝ বরাবর কিছু আলো জ্বলছে-নিভছে।’
দশকের পর দশক এরিয়া ৫১ ছিল রহস্যে আচ্ছন্ন। দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর অস্তিত্বই অস্বীকার করে এসেছে। অবশেষে ২০১৩ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এরিয়া ৫১-এর অস্তিত্ব স্বীকার করে। তবে ভিনগ্রহী প্রাণী ও ইউএফওর সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে রহস্য তত্ত্ব এখনো বহাল রয়েছে।
উল্লেখ্য, উড়ন্ত অদ্ভুত সেই বিমানের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট