দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। সামান্য বৃষ্টিতেই কেন এত জলাবদ্ধতা? - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

Thursday, 10 August 2023

সামান্য বৃষ্টিতেই কেন এত জলাবদ্ধতা?

জাতীয় প্রতিবেদক :
বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির তীব্রতা না থাকলেও শেষের দিকে এসে বেড়েছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। তবে যে পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে সেটিকে প্রবল বৃষ্টিপাত বলা যায় না বলে অভিমত আবহাওয়াবিদদের। কিন্তু এতটুকু বৃষ্টিতেই কেন তলিয়ে যাচ্ছে জেলা শহর, উপশহর ও গ্রামঞ্চল এমন প্রশ্ন অনেকের মনে।


বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কথা উঠলে সবার আগে মানসপটে ভেসে ওঠে পানিতে ডোবা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থানের চিত্র। সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকার কম করে হলেও দেড়শ’ জায়গায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তবে জলাবদ্ধতা এখন শুধু রাজধানীর সমস্যা না; বরং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, এমনকি গ্রামঞ্চলেও দেখা দিচ্ছে এ সমস্যা।

 
সম্প্রতি ভারি বর্ষণের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পুরো বান্দরবান জলাবদ্ধতার কারণে দেশ থেকে এক রকমের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা শহরটির অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। মূলত সাঙ্গু নদীর পানিতে পার্বত্য এলাকাগুলো ডুবে গেছে।


এই যখন জেলা শহরের অবস্থা সেখানে বিভাগীয় শহরের অবস্থা আরও করুণ। চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রামের সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জলাবদ্ধতার জন্য দুষলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)।
 

রেজাউল বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়েছে সিডিএ। বর্ষার আগে বাঁধ সরিয়ে নেয়ার তাগিদ দিলেও কর্ণপাত করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া চট্টগ্রামে যেসব প্রকল্প হচ্ছে সেগুলোর পরিবেশগত সম্ভাব্যতাও যাচাই করেনি তারা। বাঁধ-প্রকল্প সব জায়গায় ত্রুটি থাকার ভুগতে হচ্ছে বন্দর নগরীকে।
 

মেয়র যখন দায় চাপাচ্ছেন সিডিএর ওপর, সেখানে সিডিএ আবার সংবাদ সম্মেলন করে দায় চাপাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের ওপর। সম্প্রতি সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সব দোষ সিডিএর ওপর চাপানো হচ্ছে। সিটি করপোরেশন শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করেনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাজ পারে না বলে সরকার সিডিএকে কাজ দিচ্ছে। পানি উঠেছে ঠিকই; কিন্তু আগের মতো পানি ওঠেনি।

সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন যখন কাঁদা ছোড়াছুড়ি করছে তখন ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছেন চট্টগ্রামবাসী। বাসা-বাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। রান্নাঘরে পানি ওঠায় বন্ধ থাকছে চুলা, অনেকে দিন কাটাচ্ছেন খেয়ে না খেয়ে। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়ায় এবং মার্কেট বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
 

চট্টগ্রামের মতোই অবস্থা বরিশাল বিভাগের। একদিনের বৃষ্টিতে বিভাগীয় শহরে পানি জমে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ করায় ডুবে গেছে শহরের ৯০ শতাংশ। বিশেষ করে ভাটিখানা, গোরস্থান রোড, সার্কুলার রোড, নবগ্রাম রোড এবং অক্সফোর্ড মিশন রোডের অবস্থা বেশি ভয়াবহ। নগরবাসীরা বলছেন, এ কয়দিনের বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তা আগে কোনোদিন হয়নি।
 

দিনকে দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে উল্লেখ করে নগরবাসী জানান, এখানে জলাবদ্ধতা হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। সামনেই নদী, আর শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল কুড়ি-পঁচিশটির মতো খাল। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো কোনদিনও ছিল না। কিন্তু খাল থাকায় পানি জমতো না। তবে সাম্প্রতিক কয়েক দশকের নগরীর খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় সেই ফল ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
 
বরিশাল শহরের পাশাপাশি পানি উঠেছে বিভাগটির অন্তর্ভুক্ত ভোলা ও বরগুনা জেলায়। বৃষ্টি বৃদ্ধির পর হঠাৎ করেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকা। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌসুমি ফসল আমনের বীজতলা। কৃষকদের একরের পর একর জমি তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে। এতে করে একদিকে আর্থিক ক্ষতি, অন্যদিকে শস্য সংকটের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
 

বরিশাল বিভাগের বাইরে সিলেট বিভাগেও একই অবস্থা। গত মাসে মাত্র দুদিনের বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল সিলেট। সড়কে জাল ফেলে মাছ ধরা কিংবা রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ জানানো থেকে সবকিছুই করেছেন সিলেটবাসী। কিন্তু তাতে করে কাজের কাজ এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
 

শুধু সিলেট নয়, পানি উঠে গৃহবন্দী হয়েছেন সুনামগঞ্জের কয়েকলাখ মানুষ। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা ও যশোর এলাকার মতো অনেক অঞ্চল যেখানে আগে জলবদ্ধতা দেখা যায়নি, সেসব এলাকায়ও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
 
এত অল্প বৃষ্টিতে কেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত সময় সংবাদকে বলেন, হওয়ার মতো তেমন বৃষ্টি হয়নি, কিন্তু পানি জমেছে অনেক। সবাই ভাবে জলবদ্ধতা শুধু রাজধানীর সমস্যা। কিন্তু অপরিকল্পিত প্রকল্প এবং খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে বিস্তার পেয়েছে যে জলাবদ্ধতার সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। ঢাকার থেকে অন্যান্য জেলার অবস্থা বেশি খারাপ। ঢাকা নিয়ে অনেক কথা হয়, এসব জেলা নিয়ে তাও হয় না।
 
গ্রামঞ্চলগুলো কেন তলিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 
পাহাড়ে কিংবা নিমাঞ্চলে পানি উঠলে এটাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তকমা দিয়ে দায় সারা হয়। কিন্তু এর কোনো সমাধান প্রকল্পে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তিন বছর বা পাঁচ বছর পরপর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়; এটা জানা কথা। কিন্তু এটা জানার পরও দেশের যেসব জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করার কথা সেসব এলাকায় এর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সিলেট-সুনামগঞ্জের কথা উল্লেখ করা যায়; এসব এলাকায় ভয়াবহ বন্যার পরও বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
 

দিনকে দিন জলবায়ু খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশ বিজ্ঞানী আতিকুর রহমান বলেন, জলবায়ুতে যা যা খারাপ ঘটতে পারে সেগুলো ঘটতে শুরু করেছে। এতে করে দুর্যোগ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এখন থেকে একটি পরিকল্পনার মধ্যে সমগ্র ব্যবস্থা নিয়ে আসতে না পারলে, পরে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।