দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, দখলদারদের নাম-পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, দখলদাররা আর মাথা উঁচু করে আপনাদের সামনে হাটতে না পারে! আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি ভালোর জন্য, ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে কাজ করি তাহলে আগামীর বাংলাদেশ ভালোমানের বাংলাদেশ হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকালে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর উপজেলায় পৃথক দুটি পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা প্রত্যেক রাজনৈতিক দল একসঙ্গে জেলা-উপজেলায় কাজ করবো। আমাদের মধ্যে হবে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা। যে ভালো কাজ করে তাকেই জনগণ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবে। কেউ যদি ভালো কাজ করে, ভালো মানুষ হয় সে যদি আমার দলের নাও হয় আপনি তাকে বেছে নেবেন। কারণ, ভালো মানুষের কাছে ক্ষমতা থাকে সেই ক্ষমতা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে। যদি খারাপ মানুষের কাছে ক্ষমতা যায় তাহলে সেই ক্ষমতা এলাকায় এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য ব্যবহার হবে। আর যদি খারাপ মানুষের হাতে মার্কা আর দল দেখে আপনি ক্ষমতা তুলে দেন তাহলে সেই ক্ষমতা মানুষের শোষণ করার জন্য ব্যবহার করবে। সেই ক্ষমতা এলাকায় এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য ব্যবহার করবে। সেই ক্ষমতা আপনার ওপরে অপব্যবহার হবে।
তিনি বলেন, আগামী দিনে নতুন বাংলাদেশ গড়তে মার্কা দেখে নয়, ভালো মানুষকে সমর্থন দেবেন। কোন ব্যক্তি বা দলের অন্ধভক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আগামী দিনে দেশ ও আপনার এলাকায় কারা নেতৃত্ব দেবে সেই ভালো মানুষকে বেছে নিতে হবে। খারাপ মানুষগুলোকে বর্জন করতে হবে। তাহলে দেখবেন আমাদের নতুন বাংলাদেশ ভালো মানুষের হাতে চলে গেছে। আবার পুনরায় যদি খারাপ মানুষগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বেছে নেন তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো মূল্য থাকবে না। ভালো মানুষ যে দলের হোক বেছে নেবেন। আপনাদের যদি এনসিপির নেতাদের ভালো মনে হয় তাহলে এনসিপিকে বেছে নেবেন। আর ভালো না হলে বাদ দিয়ে দেবেন। আমাদের দলের কেউ যদি অন্যায় করে থাকলে তাকে মুখের ওপর বলে দেবেন। শুধু বলবো ভালো মানুষ চাই, দেশ পরিচালনার জন্য।
এনসিপির এ নেতা বলেন, খুনি হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ ও শোষক বাংলার মাটিতে কেউ ছিল না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে তারা। আমরা আগামীর বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাই। মা-বোনদের আগলে রাখতে হবে। নেতা হতে বড় কোনো ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট লাগে না। দরকার হয় সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতে এবং শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ।
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দরের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হলেও এখানকার রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্থা কেন? হিলির রাস্তা হবে দেশের সেরা রাস্তা অথচ হিলি রাস্তায় গাড়ির চাকা একবার ডানে যায় তো একবার বামে। এত বড়মাপের একটি স্থলবন্দরের স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন দাঁড়ায় না। বিগত দিনে হিলির উন্নয়নের জন্য যতটুকু বরাদ্দ ছিলো সেটি দেওয়া হয়েছে কি না। গত ১৭ বছর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ ডায়লগ দিয়ে হিলি স্থলবন্দরের উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা শোষণ করা হয়েছে।
সারজিস বলেন, আমরা আপনাদের অভাব ও না পাওয়ার কথাগুলো শুনতে এবং স্বচক্ষে দেখার জন্য জেলায় জেলায় আমাদের এই সফর। হিলি স্থলবন্দরে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে না কি সিন্ডিকেটের কবলে বন্দি আছে সেগুলো জানার জন্য আমাদের এই সফর। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে হিলি স্থলবন্দর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাট, স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানো, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট ও শ্রমিকরা কোনো সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি আছে কি না। লিখিত আকারে উপস্থাপন করুন। আগামী সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে দেখা করে এবং কথা বলে হিলির সব সমস্যা সমাধান করা হবে।
পৃথক পৃথক পথসভায় এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজিনা দিনা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠক মেহেরাজ শাহরিয়ার মিথুন, এনসিপির ঘোড়াঘাট উপজেলার সংগঠক আব্দুল মান্নান সরকার, জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।