যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ইসলামবিদ্বেষ এবং ইহুদিবিদ্বেষ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা, বিক্ষোভ ও মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ দুটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এসব টাস্কফোর্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়তে থাকা বিভাজন, বৈরিতা এবং নিরাপত্তাহীনতার গভীর সংকট তুলে ধরা হয়েছে।
রয়টার্স ও আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মুসলিম ও ইহুদি—উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাই বর্তমানে ক্যাম্পাসে নিজেদের পরিচয় নিয়ে শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হার্ভার্ডের ৯২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী মনে করেন, গাজা ইস্যুতে মত প্রকাশ করলে তারা একাডেমিক ও পেশাগত ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী আশঙ্কা করছেন, ক্যাম্পাসে তাদের ওপর সহিংস হামলা হতে পারে।
বিশেষ করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হয়রানির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। হিজাব পরা ছাত্রীদের মৌখিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, অনেককে ‘সন্ত্রাসী’ বলে অপমানিত করা হয়েছে। ‘ডক্সিং’ বা ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
এক মুসলিম শিক্ষার্থী প্রতিবেদনে জানান, ‘কিছু ট্রাক ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছে, যাতে আমাদের ছবি দেখিয়ে চাকরি হারানোর গল্প প্রচার করা হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে এমন ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো আরও কড়া পদক্ষেপ নিত।
অন্যদিকে, ইহুদি শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলপন্থি পক্ষপাত মোকাবিলায় গঠিত আরেকটি টাস্কফোর্স। তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ২৬ শতাংশ ইহুদি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি যেন তাদের নয়—এমন অনুভূতি কাজ করে। প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে মতামত দিলে তারা নেতিবাচক মনোভাব, স্টেরিওটাইপিং ও বৈষম্যের শিকার হন।
প্রতিবেদন দুটি এমন সময় প্রকাশিত হলো, যখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের আইনি চাপে রয়েছে। প্রশাসনের অভিযোগ, ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হওয়ায় হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি ডলারের বেশি তহবিল স্থগিত রাখা হয়েছে।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালেন গারবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে পারস্পরিক সহানুভূতি কমে গিয়ে অবজ্ঞা, বিদ্বেষ ও সামাজিক দূরত্ব বাড়ছে।’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এই সংকট নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
উভয় টাস্কফোর্সই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ডক্সিংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তা বৃদ্ধি এবং উন্মুক্ত বিতর্ককে উৎসাহিত করার মতো একাধিক সুপারিশ দিয়েছে। হার্ভার্ড প্রশাসন জানিয়েছে, এই সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।