জহির শাহ্ , ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ছেলে ফাহাদ হাসান তার বাবা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী আলম মিয়াকে (৫৮-৬০) নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা এলাকায় শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এক চরম দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঘটনাটি গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে বা ভোরে ফান্দাউক গ্রামের মুন্সিপাড়ায় হাজী আলম মিয়ার নিজ বাড়িতে সংঘটিত হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হয়েছিল এটি দুর্বৃত্তদের কাজ। কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গভীর তদন্তে প্রকাশ পায়, সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বই এই নৃশংসতার মূল কারণ। হাজী আলম মিয়া ফান্দাউক বাজারের একজন পরিচিত ব্যবসায়ী এবং ওয়াহেদ আলী ওরফে ওয়ালী মিয়ার ছেলে ছিলেন।
তদন্তে জানা যায়, ফাহাদ হাসান তার বাবার সম্পত্তির একটি বড় অংশ দাবি করছিল। বাবা তাতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফাহাদ লোহার এসএস পাইপ দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করে। ঘটনার পর ফাহাদ পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে নিজেই মামলার বাদী হয়। তবে পিবিআই তদন্তে তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফাহাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার পাইপ স্থানীয় একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
নাসিরনগর থানা পুলিশ রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং মামলা রুজু করে। বর্তমানে ফাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, এবং বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুলিশ সকল আলামত সংরক্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “একজন ছেলের হাতে বাবার এমন নির্মম হত্যা আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরেছে।” স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা এ ঘটনার জন্য নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ঘাটতিকে দায়ী করেছেন। শিক্ষাবিদরা শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে এটিকে পারিবারিক সম্পর্কে ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাবের পরিণতি হিসেবে দেখছেন।
স্থানীয়রা এবং সচেতন মহল আশা করছেন, দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষী উপযুক্ত শাস্তি পাবে। একই সঙ্গে নিহত হাজী আলম মিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন সবাই।