জেলার খবর :
অতিপ্রবল ঘুর্ণিঝড় 'মোখা' ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত হয়ে এসে তান্ডব চালিয়ে চলে গেছে। ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে ও দুর্বল হয়ে মিয়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে গন্তব্য ফিরতে শুরু করেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, 'কক্সবাজার জেলায় ৬৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ছিলো। ২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো। ঘুর্ণিঝড়টি চলে যাওয়ায় মানুষ চলে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই চলে যাচ্ছেন। যারা যেতে পারছেন না তাদেরকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'শনিবার থেকে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে থাকে।'
গতকাল সন্ধ্যায় টমটম, মোটর রিকসা, সিএনজি ও ভ্যানযোগে মানুষ বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। এদের কয়েকজনের সাথে কথা তাঁরা বলেন, 'আতঙ্ক কেটে গেছে। এবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। শুধু শুধু কষ্ট করে থাকতে যাবো কেন? একদিন নির্ঘুম রাত কেটেছে। পরিবার নিয়ে সীমাহীন কষ্ট হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শনিবার থেকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রবিবার রাতেই প্রায় লাখের উপরে মানুষ বাড়ি ফিরে গেছে।
মোহাম্মদ ইসহাক বলেন,' রবিবার সকালেই সপরিবারে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। ঘূর্ণিঝড় চলে গেছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তাই এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
কুতুবদিয়া পাড়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, 'মোখা চলে গেছে তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খুব কষ্ট।'
সমিতির পাড়া এলাকার নুরুল্লাহ বলেন,' সারারাত পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারিনি। বাচ্চারা খুব কষ্ট পেয়েছে। নানা সমস্যার কারনে রাতেই বাড়ি চলে যাচ্ছি।'
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৬৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। উপকূল ও দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাজ করেছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ ছয় হাজার। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন প্রস্তুত ছিল। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৮ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট সদস্য, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও অন্তত দেড় হাজার সদস্য কাজ করেছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস প্রধান আবদুর রহমান জানান, ' সন্ধ্যার পর থেকে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে গেছে। তবে দুই একদিন সাগর উত্তাল থাকবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
