দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ‘ব্যক্তিতন্ত্রের’ বাংলাদেশি সংস্করণ - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Saturday, 2 March 2024

‘ব্যক্তিতন্ত্রের’ বাংলাদেশি সংস্করণ


জাতীয় প্রতিনিধি :
বাংলাদেশে সম্প্রতি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; ১৯৭১ সালে অভ্যূদয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনটি দেশটির ইতিহাসে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জিতে সরকার গঠন করেছে। যার ফলে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নারী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন।


হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যার পর শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন। ২০০৮ সাল থেকে একটানা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি।


গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং জাতীয়তাবাদী নীতির একটি দল। তবে দলটি বর্তমানে এই নীতিগুলি মেনে চলে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ করা যেতেই পারে। হাসিনার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গৃহবন্দী। তার দল গেল নির্বাচনও প্রত্যাখান করেছে।


বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচন সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যদিয়ে হয়েছে। এতে ছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও। নির্বাচনকালে শেখ হাসিনা বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করেন এবং সমালোচনাকারীদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে নিজের বিজয় নিশ্চিত করেছেন। সরকার থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগের মাসে ১১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর বিএনপির দাবি, গ্রেপ্তারের এই সংখ্যা ২৫ হাজার। এর মধ্যে বিরোধীদের বিক্ষোভ চলাকালীন ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন।


হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে; তার নীতি এদের স্বার্থ  রক্ষা করে। তবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনার পঞ্চম মেয়াদের শুরুতে একটি নতুন ও অস্বস্তিকর বিষয় সামনে এসেছে। 


মূলত বাংলাদেশ অনেকটা একদলীয় শাসনব্যবস্থায় চলে গেছে। যেখানে শেখ হাসিনার চরিত্র অনেকটা স্বৈরাচারীর ভূমিকায়।


গণতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্রের আবর্তন
বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচনটি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি অনিয়মে ছেয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি অতি দ্রুতই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। বেশিরভাগ সময়ই তাদের একে-অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে। দেশে বিভিন্ন ধরণের ছোট দলও সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলো। সেই সঙ্গে প্রয়াত সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও রয়েছে।


বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করার জন্য ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের চল শুরু হয়। সামরিক শাসন থেকে সরে আসার জন্য ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া মসৃণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তুলনামূলকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে ক্ষমতাসীন দলকে অপসারণ করা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি নতুন অভিজ্ঞতার সূচনা করে। যেখানে তখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলকে পুনরায় নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। যদিও ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সাংবিধানিক বিধান পরিবর্তন করে এবং একদলীয় শাসনের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করে। এটি এবং অন্যান্য ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্থান সংকুচিত করেছে। সংবিধানের সংশোধনী এবং এর পরবর্তী পরিনতি দেশকে অতীতে টেনে নিয়ে গেছে, মারাত্মক সহিংসতা, হত্যা, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, নির্বাচনের অনিয়ম, ভোট কারচুপি এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে কলঙ্কিত করেছে।


এই সংশোধনীর প্রতিবাদে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনী বয়কটের বাইরেও দল ও বিএনপির জোটসঙ্গীরা নির্বাচনের দিন অবরোধ, হরতাল, নাশকতা, রাজনৈতিক ভীতি প্রদর্শন এবং ভোট কেন্দ্র ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলায় লিপ্ত হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ‘সবচেয়ে সহিংস’ বলে অভিহিত করেছে। যার মধ্যে ১১টিরও বেশি ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, তিনজন কর্মকর্তাকে হত্যা এবং ৩৩০ জন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাকে আহত করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও নির্বাচনের সময় এবং পরে বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলার শিকার হয়। এইচআরডব্লিউ নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং পরে ১১ জন বিরোধী নেতাকর্মীকে হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।


ওই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ২২ শতাংশের মতো ছিল বলে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বেনামে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করা ভোটার সংখ্যা ছিল ৪০.০৪ শতাংশ। নির্বাচনের পর, হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থেকেছে এবং অনেক বিরোধী নেতাকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের সহিংস হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনকালে সহিংসতার কারণে বিএনপি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থক হারিয়েছিল। দলটি শিগগিরই তার কৌশল পরিবর্তন করে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে, কিন্তু জনসমর্থন ফিরে পেতে ব্যর্থ হয়।


২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও বিএনপি শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাচনী দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবি করেছিল। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে।


গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচন ষড়যন্ত্র, ব্যাপক ক্র্যাকডাউন, গণগ্রেপ্তার, সহিংসতা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারে ভরপুর ছিল। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির তাজরিনা সাজ্জাদ বলেছেন যে, ২০২৩ সালে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন পাস করার ফলে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই আইন কিশোর, একাডেমিক, লেখক, ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মীসহ শত শত লোককে আটক করার অনুমতি দেয়।


বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজের অনেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা এবং এর স্বৈরাচারী শাসনের অবতারণা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উপরন্তু, বাংলাদেশের তরুণরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে অবমূল্যায়ন করেছে, শাসন ব্যবস্থায় দুর্নীতির কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে তাদের আগ্রহ কমে গেছে।


২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেই এই ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়। এই সময়টা বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংসতা, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং বিরক্তিকর রাজনৈতিক বক্তৃতা দ্বারা পূর্ণ ছিল। যেমন: শেখ হাসিনা বিএনপিকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী বলে অভিহিত করে অভিযোগ করেছেন, দলটি একটি ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এইসব রাজনৈতিক বাখোয়াস অবিশ্বাস, ভয় এবং মোহভঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।


মূলত নির্বাচনের আগে থেকেই বোঝা গেছে ফলাফল কী হবে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর দ্বাদশ নির্বাচনে বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ‘ডামি’ প্রার্থীদের সমর্থন করেছে। আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই নির্বাচনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখাতে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অন্য নেতাকর্মীদের উত্সাহিত করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ধারণা করে বলেছে, ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।


একনায়কতন্ত্রের দিকে অভিযাত্রা
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে একনায়কতন্ত্রের একটি ফর্মুলার প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়েছে। যা ২০২৪ সালে একেবারে ফলপ্রসূ হয়েছে, এর মাধ্যমে দলের ব্যক্তিতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন বাংলাদেশে ‘ব্যক্তিতান্ত্রিক’ শাসনব্যবস্থাকে একটি অনিবার্য বাস্তবতায় পরিণত করেছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের যেকোনো আলোচনাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি কেউ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় এবং তার পরে আবির্ভূত ব্যক্তিতান্ত্রিকতার আলাপ না তোলেন।


এমন একপাক্ষিক নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায় যে, নির্বাচন ‘অবাধ বা সুষ্ঠু’ হয়নি। বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নেরও নিন্দা জানায় তারা। কিছু দিন পরে অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং কানাডা ভোটের সময় সহিংসতার বিষয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে তারা এও বলেছে যে, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কাজ করবে। ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।


বাংলাদেশ এমন একটি পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে কোনো বিরোধী দল জনগণের কাছে যেতে পারছে না, শেখ হাসিনার সরকার সমালোচনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সমস্ত উপকরণ প্রস্তুত রেখেছে এবং কাজেও লাগাচ্ছে।


২০২৪ সালের নির্বাচনটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন ভেঙে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনের আগে সতর্ক করেছিল যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে তারা বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকে আরও গভীর করতে পারে, যা বিশেষজ্ঞরা হাসিনার মন্ত্রিসভায় সন্দেহজনক নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে সহায়তার জন্য হাত পাততে হয়েছিল। যেখানে চীন, রাশিয়া এবং ভারত সরাসরি বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিল। এটাও মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে নিষেধাজ্ঞার দিক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।


ব্যক্তিতন্ত্রকে একটি বন্দী নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ নব্য-পিতৃতান্ত্রিক শাসনের বাংলাদেশি সংস্করণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটি এমন একটি সরকারকে নির্দেশ করে যেখানে শাসকের কেবল নিরঙ্কুশ ক্ষমতাই থাকে না, সঙ্গে এটি নির্বাচনী বিজয়ের নিশ্চয়তা দেয়। পাশাপাশি এমন এক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়, যেখানে বলতে হয় ‘আমিই রাষ্ট্র’। এটি ফ্যাসিবাদের চেয়েও বেশি এবং একই সাথে স্বৈরাচারের চেয়েও বেশি। এই ধরনের কাঠামোতে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যমসহ গণতান্ত্রিক শাসনের চারটি স্তম্ভই শাসকের অধীনস্থ হয়। শাসক তার নিজের প্রতিনিধিত্ব করা দলের মতোই আচরণ করেন এবং উল্টোভাবে সেই দলটি ব্যক্তিকে ক্ষমতার প্রতীক করে তোলে।


এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নিয়ম বা নৈতিক কিংবা আদর্শিক বাধ্যবাধকতার কোনো ভূমিকা নেই। কারণ শাসক একজন ‘সিস্টেম-স্রষ্টা’ হয়ে ওঠেন। সরকারপন্থী গণমাধ্যমগুলোও দেশে একটি জবাবদিহিহীন, ব্যক্তিতান্ত্রিক সরকারের উত্থানে ব্যাপক অবদান রেখেছে। ফলে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এক ব্যক্তির রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।


আপাতত, বাংলাদেশ এমন একটি পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে যেখানে কোনো বিরোধী দল জনপ্রিয় রাজনৈতিক বিকল্প প্রস্তাব করতে পারে না, যেখানে শেখ হাসিনার সরকার সমালোচনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সমস্ত উপকরণ ধারণ করে। ভবিষ্যত নির্বাচনের বৈধতা প্রদানের জন্য নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে গঠনমূলক সংলাপে যুক্ত হওয়ার জন্য দেশের প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন হবে। তবে এ  আশা বাতুলতা যে, সরকার শিগগিরই এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করবে।

লেখাটি রোজা লুক্সেমবার্গ স্টিফটুং-এ প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে অনুদিত।