খাঁটিহাতার মাটিতে ঘুষের কলঙ্ক: ছয় পুলিশ প্রত্যাহার শুধু শাস্তি নয়, জনবিশ্বাসের ছিন্নভিন্ন প্রতিচ্ছবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় ঘুষকাণ্ডে ছয় পুলিশ সদস্যের প্রত্যাহার যেন এক গভীর সামাজিক ও নৈতিক ব্যর্থতার নগ্ন প্রকাশ; যেখানে নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল হওয়ার কথা, সেখানেই চলছে দুর্নীতির উৎসব—যেখানে আইন রক্ষকই হয়ে উঠেছে আইন ভক্ষক।
গত ৩ জুলাই রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি কাভার্ড ভ্যান আটকিয়ে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে থানার ওসি মামুন রহমানসহ এএসআই বিপ্লু বড়ুয়া ও কনস্টেবল সাহাবুদ্দিন, মোস্তু মিয়া, সাকিবুল আহমেদ ও জহির মিয়াকে ১৪ জুলাই প্রত্যাহার করে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়—এমন খবর যেন মুহূর্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে চায়ের দোকান থেকে ফেসবুক লাইভ পর্যন্ত, মানুষের মনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় একটাই: “আমাদের রক্ষকই যদি শোষক হয়, তবে বিচার চাইবো কার কাছে?”।
প্রশাসন বলছে তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা হবে—কিন্তু জনগণ বলছে, “আমরা এসব অনেক দেখেছি, ব্যবস্থা নয়, সত্যিকারের বিচার চাই।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কীর্তিমান চাকমার বিবৃতি যতই আশ্বাস দিক, বাস্তবে বারবার তদন্তের নামে ধামাচাপা দেওয়ার ইতিহাস জনমনে সন্দেহ জন্ম দিয়েছে।
এইবারও কি তার ব্যতিক্রম হবে? হাইওয়ে থানা মানেই যেন চাঁদাবাজির স্থায়ী লাইসেন্স—এই কথাটা কি আর গুজব? স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বললেন, “এখন পুলিশের পোশাকে ছিনতাইকারীর ভয় পাই”—তার কণ্ঠ শুধু ক্ষোভ নয়, এক জেগে ওঠা জনমনের প্রতিধ্বনি। খাঁটিহাতার এই ঘটনা নিছক বিচ্ছিন্ন নয়, এটি বাংলাদেশের বহু থানার ভিতরকার পচনের এক দলিল; এটি যেন সেই কলঙ্কিত আয়না, যেখানে পুরো রাষ্ট্র নিজেকে দেখতে পারে, আর দেখে—শুধু অন্ধকার।
কিন্তু সেই অন্ধকারেই যদি একফোঁটা সত্যের আলো জ্বলে ওঠে, তবে হতে পারে পরিবর্তনের সূচনা। প্রশ্ন একটাই—এই আলোটা আসবে কি? না কি আবারও তদন্তের নামে সময় কাটবে, আর জনবিশ্বাসের কবর খুঁড়া হবে থানার দালানে? এই মুহূর্তে প্রশাসনের কাছে নৈতিক সাহস আর রাজনৈতিক সদিচ্ছাই একমাত্র হাতিয়ার—দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা যদি শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে প্রমাণিত হয়, তবে হয়তো জনগণ আবার আইনের উপর ভরসা করতে শিখবে; অন্যথায়, খাঁটিহাতার মাটি শুধু এক কলঙ্কের নাম নয়, তা হয়ে উঠবে জাতিগত ব্যর্থতার প্রতীক, যেখানে প্রতিটি থানায় প্রশ্ন জেগে থাকবে—আস্থা নাকি আতঙ্ক?