দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। হাসনাতের নতুন সংবিধানের দাবিতে বিজয়নগরে এনসিপির ঐক্যের মিছিল - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Sunday, 31 August 2025

হাসনাতের নতুন সংবিধানের দাবিতে বিজয়নগরে এনসিপির ঐক্যের মিছিল


জহির শাহ্, বিজয়নগর প্রতিনিধি

ছতরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, ৩০ আগস্ট ২০২৫, শনিবার রাত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার এই মাঠে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জ্বালিয়েছে আলোর মশাল, যেন রাতের অন্ধকারে এক নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়। 



‘উঠানে নতুন সংবিধান’—এই ব্যানারের নিচে হাজারো মানুষের হৃদয়ে জাগানো হলো বিপ্লবের ঢেউ, যেখানে প্রতিটি শব্দ ছিল সত্যের ধার, প্রতিটি বাক্য ছিল ন্যায়ের দাবি। এই উঠান বৈঠক ছিল শুধু একটি সভা নয়, এটি ছিল একটি জীবন্ত ঘোষণা।



বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে নতুন সংবিধানের পতাকা উড়বে, গণপরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হবে। এনসিপির বিজয়নগর উপজেলা কমিটির আয়োজনে, প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে, এই বৈঠকের প্রধান অতিথি হাসনাত আবদুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, তাঁর বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে, আমাদের ভাগ্যে অপেক্ষা করছে আরেকটি নির্মম পরিণতি।” তাঁর কথায় জ্বলে উঠলো জনতার হৃদয়, যেন প্রতিটি শব্দ রক্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে দিল। 



এই বৈঠকের পটভূমি ছিল ৫ আগস্ট ২০২৫-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, যখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, এবং এনসিপি ও হাসনাত আবদুল্লাহ এই পরিবর্তনের পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হন। এই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এই বৈঠক ছিল জনগণের কাছে একটি আশার বার্তা, একটি ঐক্যের আহ্বান। 



হাসনাত তাঁর বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানান, তাঁকে ‘নুর ভাই’ বলে সম্বোধন করে বললেন, “এই হামলা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি আমরা সিস্টেম না বদলাই, তাহলে আমাদের জন্যও একই অপেক্ষা করছে।” 



তিনি বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ওপর অতীতের হামলার কথা উল্লেখ করে বললেন, “তারেক রহমানকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করে তাঁর মাজা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আমাদের জন্যও তেমন পরিণতি অপেক্ষমাণ।” এই কথাগুলো শুধু নিন্দা নয়, এটি ছিল একটি যুদ্ধ ঘোষণা—রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে, বিভেদের বিরুদ্ধে, এবং অবিচারের বিরুদ্ধে। হাসনাতের কণ্ঠে ছিল জনগণের ব্যথা, তাঁর শব্দে ছিল নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। 



তিনি আরও বললেন, “আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবোই,” যে কথা তিনি আগে কুমিল্লার দেবিদ্বারে বলেছিলেন, এবং সেই প্রতিধ্বনি এখন ছতরপুরের মাঠে জনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ—ডা. মাহমুদা মিতু, মো. আতাউল্লাহ, সাইফ মোস্তাফিজ, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জিয়ান।



প্রত্যেকে তাঁদের বক্তব্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা জাগানোর আহ্বান জানান। ডা. মাহমুদা মিতু সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেন, মো. আতাউল্লাহ গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জোরালো করলেন, আর সাইফ মোস্তাফিজ স্থানীয় জনগণকে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানালেন। এই বৈঠকের একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল হাসনাতের বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার প্রসঙ্গে মন্তব্য। 



তিনি বললেন, “রুমিন ফারহানার এলাকায় এসেছি, তিনি আমাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। এটি রাজনীতির জন্য পজিটিভ।” এই কথা শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়, এটি ছিল একটি ইঙ্গিত—বিজয়নগরে এনসিপি এবং বিএনপির মধ্যে সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনার। এটি রাজনৈতিক ঐক্যের একটি সূক্ষ্ম বার্তা, যা বাংলাদেশের বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই বৈঠকের পটভূমিতে রয়েছে ২৯ আগস্ট ২০২৫-এর ঢাকার বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, যেখানে নুরুল হক নুরকে পুলিশ এলোপাথারিভাবে মারধর করে, যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনা ছতরপুরের বৈঠকে নিরাপত্তা ও ঐক্যের বিষয়টিকে আরও জরুরি করে তুলল। হাসনাত নিজেও রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়েছেন—৪ মে ২০২৫-এ গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় তাঁর গাড়িতে হামলা হয়, যাতে তিনি আহত হন। 



এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, এনসিপি এবং তাঁর নেতৃত্ব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মুখোমুখি। তবুও, হাসনাতের কণ্ঠে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। তিনি বললেন, “আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করেছি, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরও উসকানি প্রতিরোধ করেছি।” এই কথা জনতার মধ্যে আশার সঞ্চার করল, যেন তাঁরা বুঝলেন, এই নেতৃত্ব শুধু স্বপ্ন দেখায় না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও দেখায়। এই বৈঠকের মূল দাবি ছিল গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। হাসনাত বললেন, “পূর্ববর্তী সরকার সংবিধানের অপব্যবহার করেছে, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করেছে। আমরা এমন সিস্টেম চাই না।” তাঁর কথায় জনতার মধ্যে একটি নীরব প্রতিজ্ঞা জন্ম নিল।



একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য, যেখানে ন্যায়বিচার, সমতা, এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। এই বৈঠক ছিল শুধু একটি রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, এটি ছিল জনগণের হৃদয়ের কথা, তাঁদের ব্যথার প্রতিধ্বনি, এবং একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা। প্রতিটি বক্তব্য ছিল যেন একটি মিছিল, প্রতিটি শব্দ ছিল যেন একটি বিপ্লব। এই রাতে, ছতরপুরের মাঠে, এনসিপি শুধু একটি দল নয়, একটি আন্দোলন হয়ে উঠল—যে আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাবে।