জহির শাহ্ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ভূ-পদার্থবিজ্ঞানের মানচিত্র অনুযায়ী সক্রিয় ‘ট্রান্সভার্স শিয়র–ফল্ট সিস্টেম’-এর ওপর অবস্থান এবং সাম্প্রতিক ভূকম্পনীয় মাইক্রো-সিগন্যালের ঘনঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দীর্ঘদিন ধরেই দেশের “হাই-সিসমিক এক্সপোজার জোন” হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। তবুও শহরসহ সমগ্র জেলায় এখনো পর্যন্ত কোনো স্ট্রাকচারাল সিসমিক ভালনারেবিলিটি ইনভেন্টরি, র্যাপিড ফ্রাজিলিটি অ্যাসেসমেন্ট বা অবসোলেট বিল্ডিং রিস্ক রেজিস্টার প্রস্তুত করা হয়নি—পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস এবং গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা এটাই।
সপ্তাহের শুরুতে অনুভূত ভূকম্পনটি ৩–৫ সেকেন্ড স্থায়ী হরাইজন্টাল গ্রাউন্ড মোশন অ্যামপ্লিফিকেশন তৈরি করে পানপট্টি এলাকার বহু স্থাপনা সাময়িকভাবে দুলিয়ে তোলে। ব্যবসায়ী খোকন মিয়ার বর্ণনা—“পুরো ভবনটা যেন হঠাৎ ফ্রেম-শিফটে ঢুকে গেল”—স্থানীয় ভবনগুলোর রেজোন্যান্স–সংবেদনশীলতা ও অ্যানালগ স্ট্রাকচারাল ফেটিগ থাকার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কম্পন পুরোনো নির্মাণে মোড-শেপ বিকৃতি এবং কলাম–বিম জয়েন্ট ফেইলিওর-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক নিউটন দাস বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তকরণ একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া; ফায়ার সার্ভিস স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অডিট করে না। তবে জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্টেশন থাকা সত্ত্বেও, ভবনভিত্তিক রিয়েল-টাইম রিস্ক প্রোফাইলিং ডেটা অনুপস্থিত থাকায় জরুরি সাড়া (Emergency Response Modelling) শতভাগ কার্যকর হয় না।
পরিকল্পনাবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস আরা নিশ্চিত করেছেন—২০২২ সালে যোগদানের পর এখনো কোনো ইন্টিগ্রেটেড আরবান সিসমিক রিস্ক ডাটাসেট, স্ট্যাটিক লোড–বিয়ারিং মূল্যায়ন বা ওকুপেন্সি-ভিত্তিক ঝুঁকি রেটিং প্রস্তুত করা হয়নি। এর ফলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর সিসমিক ডিমান্ড–ক্যাপাসিটি রেশিও প্রশাসনিকভাবে অচিহ্নিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব জানান, তাদের দপ্তর শুধুমাত্র সরকারি ভবনের স্ট্রাকচারাল ইন্টেগ্রিটি স্ক্যান পরিচালনা করে। নবীনগর উপজেলার পুরাতন আদালত ভবনসহ কয়েকটি স্থাপনাকে হাই-ড্যামেজ পটেনশিয়াল স্ট্রাকচার হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো ডেমোলিশন–রিকনস্ট্রাকশন সাইকেলে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সরকারি অবকাঠামোর রিগোরাস সেফটি-অডিটিং প্রসেস চলছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দেশে এখনো কোনো এর্লি–ওয়ার্নিং সিসমিক প্রেডিকশন অ্যালগোরিদম বা প্রি-কার্সর ডিটেকশন নেটওয়ার্ক নেই। ফলে জনগণের সচেতনতা ও মহড়া-নির্ভরতাই প্রধান প্রতিরক্ষা। তিনি আরও জানান, বড় মাত্রার ভূকম্পনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের একটি কন্টিনজেন্সি–অরিয়েন্টেড র্যাপিড রেসপন্স ব্লুপ্রিন্ট রয়েছে; তবে এর কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে ভবনসমূহের আপডেটেড স্ট্রাকচারাল ডেটা–রিপোজিটরি থাকা না–থাকার ওপর।
