জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
নবীনগরের শতবর্ষী শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এখন প্রতিদিন সকালে শোনা যায় সাইকেলের ঘণ্টার মিষ্টি শব্দ আর মেয়েদের হাসি-গল্প। দূরের গ্রাম থেকে চড়ে আসা লাল-নীল-সবুজ সাইকেলগুলো যেন নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার নতুন প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রসুল্লাবাদের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাহিদা আক্তার আগে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতেন। “ধুলোবালি আর রোদে ক্লান্ত হয়ে ক্লাসে পৌঁছাতাম, অনেক দিন অনুপস্থিতও থাকতাম,” বললেন তিনি। সাইকেল পাওয়ার পর ছবিটা পাল্টে গেছে। “এখন মিনিট পনেরোতে চলে আসি, ক্লাস মিস হয় না, পড়ায় মন বসে।”
শান্তিপুর, নোয়াগ্রাম, শ্রীঘর, নাছিরাবাদ, কুড়িনাল—একের পর এক গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক ছাত্রী এখন সাইকেলে চড়ে স্কুলে হাজির হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে সাইকেল বিতরণ করার পর থেকে মেয়েদের উপস্থিতির হার বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে তাদের মুখের হাসি আর আত্মবিশ্বাস।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহাম্মদ জানান, “মেয়েরা এখন সময় বাঁচাচ্ছে, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কখন বেরোবে, কখন ফিরবে। আমরা বিশেষ সাইকেলস্ট্যান্ড তৈরি করেছি। কেউ যদি বিরূপ মন্তব্য করে, তাকে সতর্ক করা হয়, প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
নবম শ্রেণির রাশিদা আক্তার বললেন, “আগে হেঁটে এসে ঘেমে-নেয়ে ক্লাসে বসতাম। এখন টিফিন খেয়ে আরামে দ্বিতীয় ক্লাসে যাই। সাইকেলটা আমার কাছে শুধু যানবাহন নয়, আমার স্বাধীনতা।”
গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আক্কাছ মিয়ার মেয়েও এখন সাইকেলে স্কুলে যায়। তিনি বলেন, “কিছু লোক এখনো ভ্রূ কুঁচকে তাকায়, কিন্তু আমি মেয়েকে বলি—চালাও, পড়ো, এগিয়ে যাও। ওর মুখের হাসি দেখলেই মন ভরে যায়।”
প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। সাইকেল যেন তাদের পায়ে ডানা লাগিয়ে দিয়েছে। নিরাপদ যাতায়াতের এই সহজ সমাধান শুধু উপস্থিতি বাড়ায়নি, মেয়েদের মধ্যে গড়ে তুলেছে নেতৃত্বের ভাষা, সাহস আর স্বপ্ন দেখার অধিকার।
নবীনগরের এই ছোট্ট উদ্যোগ প্রমাণ করছে, একটা সাইকেলই পারে গ্রামের মেয়েকে বদলে দিতে—তাকে শুধু ছাত্রী নয়, আগামীর পথিকৃৎ বানিয়ে।
