আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঈদের ছুটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের গোছানোর চেষ্টা করছেন বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী সভাপতি ও বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জাকির। গত ১০ জুন ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা বড়াইল ৪ বাড়ি গোষ্ঠীর কাজীবাড়িতে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আবু তাহেরের বাড়িতে এক সভায় মিলিত হন। সেখানে বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মীর, জাকির হোসেন, কাজী জালাল উদ্দীন, আলমগীর মীর, সেলিম খান সহ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা বক্তব্য দেন। উপস্থিত নেতা কর্মীরা মতবিনিময় শেষে সবাই আগামীতে একত্রিতভবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
পরের দিন ১১ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বুধবার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা তাদের শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে বড়াইল বাজারে প্রকাশ্যে স্থানীয় দুই বিএনপি নেতা কর্মী কাজী ফরিদ ও মোহাম্মদ সুমন সরকারের ওপর হামলা করেন। কাজী ফরিদের মিষ্টির দোকান এসময় লুট হয়। হামলায় গুরুতর আহত হন কাজী ফরিদ ও সুমন সরকার।
তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মোহাম্মদ সুমন সরকারকে রাজধানী ঢাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়। কাজী ফরিদের বড় ভাই কাজী মুসা বড়াইল ইউনিয়ন বিএনপি'র ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি। তিনি বলেন, 'বর্তমান সময়েও বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা হবে সেটা অনাকাঙ্খিত।
বড়াইল বাজারে আমার ভাইদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা সেটা মেনে নেয়া যায় না।' হামলায় আহত কাজী ফরিদ বলেন, 'আমার দোকানের সামনে আমার চোখের সামনে আমার ভাইকে মারবে আর আমি বসে থাকবো সেটা তো হয়না। ইসমাইল খাঁ এর ছেলে আবু নাসের বিদেশ থেকে ফিরে এ হামলায় নেতৃত্ব দিবে এটা মেনে নেয়া যায় না।' হামলায় আহত সুমন সরকার বলেন, ' বড়াইল ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি ও বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার আবুল বাশার ভাইয়ের সঙ্গে গোসাইপুরে উনার অফিসে দেখা করে আমি বড়াইল বাজারে আসি। রাত ৮:০০ টার দিকে এশার নামাজের আজান দেয়ার পর আমি বড়াইল বাজারের ব্রিজের গোড়ার ফার্মেসি থেকে উত্তর বাজারের দিকে আমার মামাতো ভাই কাজী ফরিদ ভাইয়ের দোকানের দিকে যাই।
এ সময় দেখি বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান কাজী জাকির হোসেন বড়াইল ব্রিজের কাছে দক্ষিন বাজারের দিকে হেঁটে আসছেন। বাজারে ফরিদ ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে উনার দোকানের সামনে কথা বলার সময়ই সন্ত্রাসী কাজী আবু তাহের, তার মেয়ের জামাই আবু নাসের খাঁ ওরফে মোহাম্মদ আশরাফুল, তাহেরের ছোট ভাই কাজী জালাল উদ্দীন, জালালের ছেলে কাজী সাব্বির সহ বেশ কয়েকজন কোন কথা ছাড়াই আমাকে বেধরক মারতে থাকেন।
কাজী ফরিদ ভাই আমাকে রক্ষা করতে এলে উনাকেও আবু নাসের খাঁ ব্যাপক মারধর করেন। হৈ চৈ শুনে ফরিদ ভাইয়ের অন্য ভাই জাকির, মনিররা বাজারে চলে এলে কাজী আবু তাহের তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যান। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৪৩ শতক সরকারী খাস জমিতে জাকির চেয়ারম্যান অবৈধ বিল্ডিং বানিয়েছিলেন। জাতীয় সাংবাদিক কাজী ইমরুল কবীর সুমন এবং আমার লেখালেখি এবং যোগাযোগের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলমের নির্দেশে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব চৌধুরী এই জমিটিকে শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ হিসেবে উন্মুক্ত করেন। আমি কিছুদিন আগে বড়াইল ইউনিয়নের গোসাইপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রাসেল মাহমুদ ও সিনিয়র সাংবাদিক কাজী ইমরুল কবীর সুমন সহ উপস্থিত সাংবাদিক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বড়াইল বাজারের উত্তরে হিন্দুবাড়ির পুকুরপাড়ে সরকারী এই খাসজমিতে "বড়াইল ইউনিয়নের শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ" ব্যানারটি উদ্বোধন ও টাঙানোতে সহযোগিতা করি। এ কারণে জাকির চেয়ারম্যান আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
তিনি গুটি করে তার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কাজী আবু তাহের, আবু নাসের খাঁ, কাজী জালাল উদ্দীন, কাজী সাব্বিরকে নিয়ে আমাকে হামলার পরিকল্পনা করেন এবং তার লোকজন দিয়ে আমাকে মারধর করান।' বড়াইল ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি ও বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার আবুল বাশার এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী জাকির চেয়ারম্যান দিব্যি বড়াইলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জাকির চেয়ারম্যানের সরাসরি উপস্থিতিতে তার নির্দেশ, উস্কানি ও ইন্ধনেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বড়াইলে বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করার সাহস পাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে জাকির চেয়ারম্যানসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি।' বড়াইল রংধনু পাঠাগারের চেয়ারম্যান, নবীনগর উপজেলা গ্র্যাজুয়েট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক কাজী ইমরুল কবীর সুমন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'দাঙ্গাবাজরা আমার আত্মীয় বা স্বজন এ পরিচয় কেউ দিবেন না। ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী, মাদকের গডফাদারদের আমি এড়িয়ে চলি। হত্যা মামলা, অগ্নি সংযোগ, ভাঙ্গচুর, মানহানি সহ একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন এবং মাওলানা কাজী আলমগীরের নির্দেশে এই হামলা যারা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চায় বড়াইলবাসী।'
তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, 'দাঙ্গাবাজরা আমার আত্মীয় বা স্বজন এ পরিচয় কেউ দিবেন না। ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী, মাদকের গডফাদারদের আমি এড়িয়ে চলি। হত্যা মামলা, অগ্নি সংযোগ, ভাঙ্গচুর, মানহানি সহ একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন এবং মাওলানা কাজী আলমগীরের নির্দেশে এই হামলা যারা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চায় বড়াইলবাসী।'