দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। কাল শোকাবহ ১৫ আগস্ট - Durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Monday, August 14, 2023

কাল শোকাবহ ১৫ আগস্ট


জাতীয় ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে এদেশের কলঙ্কের ইহিতাসে সৃষ্টি হয়। সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান।  সে কলঙ্ক দেশ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে।


হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম তার ‘সৈনিক জীবন গৌরবের একাত্তর রক্তাত্ত পঁচাত্তর’ বইতে পচাঁত্তরের এর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে একটি বৃহৎ পরাশক্তির ছত্রছায়ায় প্রণীত সুপরিকল্পিত প্রয়াস বলে অভিহিত করেছেন।

 
গ্রন্থটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। হাফিজ উদ্দিন একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ভেতর থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল তার। পঁচাত্তরে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমদের এই গ্রন্থে তার নির্মোহ বয়ানে উঠে এসেছে সেইসব চিত্র।

 
তিনি লিখেন, ‘পনেরই আগস্টের অভ্যুত্থান ছিল একটি বৃহৎ পরাশক্তির ছত্রছায়ায় প্রণীত সুপরিকল্পিত প্রয়াস এবং এর টাইমিং ছিল গভীর চিন্তাপ্রসূত। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস, দেশটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ও সামরিক বাহিনী সেদিন দিবসটি উদযাপনে ব্যস্ত থাকে। ঘটনা ঘটানো হয় শুক্রবারে। বাংলাদেশে এটি জুমার নামাজের দিন। ফলে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিরা অনেকটা ছুটির মেজাজে থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সংকট কালে প্রধান ভরসা রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান ১৫ আগস্টে সরকারি কাজে বিদেশে অবস্থান করছিলেন। ফলে, অভ্যুত্থানকারীদের বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’
 
 
হাফিজ আরো লিখেছেন, অন্যদিকে সামরিক গেয়েন্দা বাহিনীর ডিজিএফআইয়ের প্রধান রূপে মাত্র কয়েকদিন আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন। তিনি ব্রিগেডিয়ার আবদুর রউফের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। অর্থাৎ তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ পদে ধাতস্থ হওয়ার আগেই অভ্যুত্থান ঘটে যায়। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু আক্রান্ত হওয়ার পরপরেই জামিলকে ফোন করে তার সাহায্য চান। জামিল সিভিল ড্রেসে তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে একাকী ৩২ নম্বরের উদ্দেশ্যে ছুটে যান। বোঝাই যাচ্ছে তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারেননি।  সোবহানবাগ এলাকায় পৌঁছালে অভ্যুত্থানকারী সৈনিকরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।

 
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হাসান উজ্জামান তার ‘১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থান মুজিব হত্যা ও ধারাবাহিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কেবল শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড ঘটেনি, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারেরই ক্ষমতাচ্যুতি হয়নি, ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল।

 
তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার, সরকার পরিবর্তনে তাদের ইচ্ছাশক্তি ও রায়কে অস্বীকার করা হয়েছিল। কার্যত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নিধন করা হয়েছে।  
 
 
তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান সংঘটিত করে শেখ মুজিব এবং তার সহযোগীদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, নিজেদের ইচ্ছে মাফিক বেয়নেটের ডগায় রাষ্ট্রপতি বানিয়ে, মন্ত্রিসভা গঠন করে, সরকার তৈরি করে সম্পূর্ণভাবে সংবিধান-বিযুক্ত করে ‘সুপ্রা কনস্টিটিউশনাল’ কর্তৃত্বে সমগ্র দেশকে সামরিক আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। তার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণাত্মক এই বইটি ১৯৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।

 
গ্রন্থটিতে হাসান উজ্জামান আরো বলেন, ১৫ আগস্টের অন্যায় স্পর্ধাকে জাতি মেনে নিয়েছিল বলেই ১৫ বছর ধরে এ দেশে যথাক্রমে জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসন চলেছে। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে অবৈধ বলে প্রতিরোধ করা হলে একের পর এক দু’ডজনেরও অধিক অভ্যুত্থান প্রক্রিয়া ঘটতো না। একের পর এক এত হত্যাকাণ্ড হতো না। ১৫ বছর দেশ সামরিক শাসনের কবজায় থাকতো না। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েকদিন পর ২৮ আগস্ট ‘দি গার্ডিয়ান’ লিখে ১৫ আগস্টের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেন বাংলাদেশের জনগণ আইয়ুবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রচারণা এবং সামরিক শাসনের কালে প্রত্যাবর্তন করেছে।
 

পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার কয়েক বছর পর ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিনেও বলা হয়, ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিবের হত্যার পর গণতান্ত্রিক আমলের অবসান হয়।

 
এদিকে, ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছিল তা যে সাংবিধানিকভাবে বৈধ ছিল না, খোদ সরকার প্রধান হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদও তার প্রথম ভাষণে তা উল্লেখ করেছিলেন।
 
 
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মোশতাক সামরিক আইনের জবর দখলকারী স্বত্বের জোরে সরকার প্রধান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও ও টেলিভিশনে এদিন এক ভাষণ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। ভাষণে মোশতাক এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এবং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঠিক ও সত্যিকারের আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপদানের পূতপবিত্র কর্তব্য সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য করুণাময়ের দোয়ার ওপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

 
তিনি আরও বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সর্বমহলের কাম্য হওয়া সত্ত্বেও বিধান অনুযায়ী তা সম্ভব না হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে।

 
মোশতাকের এই ভাষণে অবশ্য আরো একটি দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীও এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে এবং সরকারের (তার) প্রতি অকুন্ঠ আনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছে। তবে, সেনাবাহিনীর পুরো অংশ এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না তা কিন্তু এখনো উদঘাটিত হয়নি। আর বিধান অনুযায়ী পরিবর্তন সম্ভব না হওয়ার কথা বলে নিজেই নিজের সরকারকে অবৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

 
বিশিষ্টজনদের মতে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারায় মৌলবাদের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটে।