জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর শনিবার সকাল থেকেই যেন এক অন্য রূপ নিয়েছিল। যারা বছরের পর বছর নীরবে ফাইল সরানো, ঝাড়– দিয়ে দেওয়া, হাসপাতালের বেড গোছানো আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লাইনম্যানের কাজ করে গেছেন, সেই ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীরা হঠাৎ রাজপথে নেমে এলেন। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে একটাই কথা: “আর নয়!”
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ডাকে সকাল ১০টায় অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাজারো কর্মচারীর পদধ্বনি শেষ পর্যন্ত প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। উপস্থিত জনতার মধ্যে ছিলেন কালেক্টরেটের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান, সড়ক বিভাগের শ্রমিক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মী—যাদের কারো বেতন ১৫ হাজার, কারো বা ১৮ হাজার টাকা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মো. মনির হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী হাফিজুল ইসলাম নাছুর এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আরশাদুল ইসলাম। বক্তারা একে একে মঞ্চে এসে বললেন, “যে দেশে প্রতিদিন পণ্যের দাম বাড়ছে, সেখানে আমাদের বেতন গত আট বছর ধরে একই জায়গায় আটকে আছে। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের চিকিৎসা—সবই এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তাদের পাঁচ দফা দাবি:
১. ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি ও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর।
২. টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, শতভাগ পেনশন ও ব্লকপোস্টে পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
৩. আউটসোর্সিং ব্যবস্থা বন্ধ এবং শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ।
৪. ন্যায্যমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু।
৫. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ বাস্তবায়ন করে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন গঠন ও ধর্মঘটের অধিকার দেওয়া।
বক্তব্য দেন কালেক্টরেট নন-গেজেটেড কর্মচারী সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম ভূইয়া, কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ, সমাজসেবা কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সমিতির জহিরুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথের আমির হামজা, বিদ্যুৎ বোর্ডের মো. মনির, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের হাজী আব্দুল্লাহ, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আব্দুল মোমেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মো. ইসমাইল, ১৭–২০ গ্রেডের নজরুল ইসলামসহ অনেকে।
একজন বক্তা বলেন, “আমরা সরকারি কর্মচারী বলে আমাদের ধর্মঘট করার অধিকার নেই। কিন্তু শ্রমিকরা যদি ধর্মঘট করতে পারে, তাহলে আমরা পারব না কেন? আমরাও তো মানুষ!”
সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন, দাবি আদায় না হলে আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে—কলম বন্ধ, অফিসে তালা, এমনকি অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটও অসম্ভব নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই সমাবেশ কেবল এক জেলার ঘটনা নয়; এ হলো সারা দেশের লাখো নিম্নগ্রেড কর্মচারীর ক্ষোভের প্রথম দৃশ্যমান বিস্ফোরণ। যে আগুন এখানে জ্বলতে শুরু করেছে, তা ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
