রাজনীতি প্রতিবেদক :
‘‘ আজকে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদ গোটা দেশকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। এই গ্রাস করার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা। তারা যেভাবে অপকর্ম করে, যেভাবে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নেয়, তারা যেভাবে মানুষের নুন্যতম যে সাংবিধানিক অধিকারগুলো থাকে তাকেও যখন কেড়ে নেয়, সেটাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা সেটার জন্য গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন হয় সেটাই তারা ধীরে ধীরে সুকৌশলে এটা করে আসছে।”- কথা গুলো বলেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আজ ১৪ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ডেনমার্কসহ ৭টি দেশের কুটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক সেমিনারে উপস্থিত হয়ে এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার লক্ষ্যে তাদের পুরনো যে আশা-আকাংখা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা-বাকশালের মতো প্রতিষ্ঠা করার জন্যে পুরো আয়োজনটা সম্পন্ন করেছেন। তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছেন, এই সংবিধান পরিবর্তন করতে গিয়ে তারা পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণ করেছে,নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং পুরো গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আজকে গোটা সমাজটাকে এমন একটা জায়গা এই সরকার নিয়ে চলে গেছে যেখানে এই সমাজে আমার বলতে আর দ্বিধা নেই তারা পুরো সমাজটাকে নষ্ট সমাজে পরিণত করেছে।”
‘করপোরেট মিডিয়া তৈরির নেপথ্যে” নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে ৫২ বছর পরে এসে আমাদের বলতে হচ্ছে যে, এখানে কোনো গণতন্ত্র নেই, আমাদেরকে বলতে হচ্ছে এখানে গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই, এখানে এসে বলতে হচ্ছে যে, এতোগুলো যে মিডিয়া এই মিডিয়াগুলো আসলে কোনো কাজ করতে পারে না… চাইলেও।”
বিএনপি মহা সচিব বলেন, ‘‘এখানে সুকৌশলভাবে একটা করপেোরেট মিডিয়া তৈরি করা হয়েছে যেখানে দেখবেন যে, সমস্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো একেকটি পত্রিকার মালিক, একেকটি টিভি চ্যানেলের মালিক। দ্যাটস ওয়াই তারা তাদের যে ব্যবসা এবং একই সঙ্গে সরকারের যে সুবিধাগুলো ভোগ করা, ব্যাংকের সুবিধা ভোগ করা। যারা টাকা পাচার করে দিচ্ছেন তাদেরকে রক্ষা করা। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আজকে গণমাধ্যমে করপোরেট কালচার তৈরি করেছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন.. খুব ইন্টারেস্টিংলি একটি গণমাধ্যমে আরেকটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যখন প্রচার করে তখন দেখবেন একজন ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রচার করছে।সবাই কিন্তু এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে মূল কথা হচ্ছে, গণমাধ্যম ছাড়া মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব নয়। আবার গণমাধ্যমের যদি স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কাজ করতে পারে না। এজন্য আমাদের সবার আগে প্রয়োজন দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা … সেই কাজটা আমরা করছি, আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে সেটা করার চেষ্টা করছি।”
দলের ৪০ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৬‘শর অধিক গুম ও সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যার ঘটনাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
‘খালেদা জিয়ার চিকিতসা প্রসঙ্গে’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেশের জনপ্রিয় নেত্রী যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, এখানে করছন এই অসুস্থ অবস্থায়। এখনো এভার কেয়ার হাসপাতালে তাকে ডাক্তাররা জীবন-মরণ নিয়ে লড়াই করছে। সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। আজকে তাকে চিকিতসার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছে না। আমরা বার বার বলেছি, তার পরিবার থেকে বলা হয়েছে যে তাকে বিদেশে চিকিতসা করার সুযোগ দেয়া হোক… সরকার সেটুকু দিচ্ছে না। এই যে অমানবিক, ভয়াবহ, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ.. এটা একটি সর্বগ্রাসী, এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো জায়গায় দেখাতে পারবেন না।”
পুরো দেশ জুড়ে ভিকটিমদের আর্তি-র ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন,গুম থেকে ফিরে আসা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেছেন, ‘‘যে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই সেদেশে স্বাধীনতা শব্দটাই সুদূর পরাহত একটা শব্দ মনে হয়। আমরা কি আসলে স্বাধীন? আমার পরিবারের ওপরে যে নিপীড়ন করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত যেভাবে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়, প্রতিমুহুর্তে আমার পরিবারের মানুষ ভাবে আমি কি আবার গুম হয়ে যাব, আমাকে কি আবার তুলে নিয়ে যাওয়া হবে? হতেই পারে। মৃত্যু তো আমি জানি না কোন খানে হবে কিন্তু আমি নিয়ত পরিস্কার করেছি আমি সাংবাদিক সত্য কথা বলে যাবো।”
জামালপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে মৃত্যুবরনকারী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর কণ্যা রাব্বাতুন জান্নাত বলেন, ‘‘ আমাদের বকশীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের কমিটির নেতৃত্ব পেয়েছিলো দুইজন রাজাকারের সন্তান….। এই নিউজের জের ধরে আব্বু প্রাণে বেঁচে গেলও ১৪ জুন তারা নির্দেশ দিয়ে প্রচন্ড মারদোর করে, আব্বু গুরতর আহত হয়ে ১৫ জুন মারা যান। আমার আব্বুর কি দোষ ছিলো এই রাজাকারের সন্তানদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য।”
‘‘ আমরা তো জানি বাংলাদেশ রাজাকার মুক্ত। কিন্তু স্বাধীনতার এতবছর পরেও কেনো রাজাকারের সন্তানরা দেশ শাসন করবে? রাজাকারের হাতেই আব্বু খুন হয়। রাজাকারের বিরুদ্ধে নিউজ না করলে আমার আব্বু মারা যাইত না। আমরা কোনো দল করি না। আমরা এখানে এসেছি আব্বুর হত্যার সঠিক বিচার চাইতে।”
গণমাধ্যমের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ ও যুগান্তরের সহকারি সম্পাদক মাহবুব কামাল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ সেমিনারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ আখন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান, এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজীর অধ্যাপক এটিএম নুরুল আমিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, তাজমেরী এস এ ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সুজা উদ্দিন, একরামুজ্জামান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাইদ সোহরাব, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের রেজা কিবরিয়া, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের শামসুল আলম, হারুন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, বিএলডিপির আবদুল করিম আব্বাসী, শাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সদরুল আমিন, কাদের গনি চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, আমিরুল ইসলাম কাগজী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
