দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। রেমিট্যান্স পাঠাতে মালদ্বীপ থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রবাসীদের-স্থায়ী সমাধান চায় প্রবাসীরা - durontobd

durontobd

The world of humans is no longer human. The relationship between blood and soul no longer exists. There is only a story of selfishness. We don't think once that at any time I or you can leave this world. Even then, the world is still going on about who will kill and eat whom. Who will cheat whom to grow up. This is not desirable in this world.....

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Sunday, August 13, 2023

রেমিট্যান্স পাঠাতে মালদ্বীপ থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রবাসীদের-স্থায়ী সমাধান চায় প্রবাসীরা


কাজী তৌহিদুল ইসলাম মালদ্বীপ থেকে :
মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য যথেষ্ট ব্যাংকিং পরিষেবা নেই। ফলে, প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হয়, গুনতে হয় বাড়তি খরচ। বাধ্য হয়ে হুন্ডি বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হয় প্রবাসীদের। তাই, মালদ্বীপে বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখা খোলার দাবি জানিয়েছেন মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।


প্রবাসীদের মালদ্বীপে নিয়োগের সময় ডলারে বেতন দেওয়ার কথা কাগজে উল্লেখ করা হলেও বেশিরভাগ কোম্পানি ও মালিকপক্ষ বেতন দেয় মালদ্বীপের মুদ্রা রুপিয়ায়। সরকারিভাবে ১৫ দশমিক ৪২ রুপিয়া দিয়ে কিনতে হয় এক ডলার। কোম্পানিগুলো কর্মীদের রুপিয়া দিয়ে বেতন পরিশোধ করে সরকারি দামে। তার মানে ১৫ দশমিক ৪২ রুপিয়া করে। প্রবাসীদের দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হয় ডলার কিনে। ডলার কিনতে হয় ব্ল্যাক মার্কেট থেকে। ব্ল্যাক মার্কেটে এক ডলারের দাম ১৭-১৮ রুপিয়া। এতে প্রতি ডলারে তিন থেকে চার রুপিয়া বেশি দিতে হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে প্রতি ডলারে ২৫-৩০ টাকা কম পান প্রবাসীরা।


বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে আসা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই শ্রমিক। তাদের অধিকাংশই এখন নানা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মালদ্বীপে ৬০ থেকে ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর ছিল ১ লাখের বেশি। এসব শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অবৈধ। তারা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিক আছেন। অবৈধভাবে মালদ্বীপের বিভিন্ন দোকান-মার্কেট-রিসোর্ট-হোটেলে কাজ করার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন অনেক বাংলাদেশি। এসব শ্রমিকের মধ্যে যারা বৈধভাবে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক প্রবাসী ভালো আছেন।

 
যারা অবৈধ, তারা সমস্যার মধ্যে আছেন। তারা অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে পারেন না। বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন না। কারণ, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে বৈধ কাগজপত্র থাকতে হয়।যেসব প্রবাসী বৈধ। বেতন পাচ্ছেন রুপিয়ায়। তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে গেলে দেখা দেয় সমস্যা। কারণ, ডলার পাওয়া যায় না সরকারি দামে। কিনতে হয় তিন থেকে চার রুপিয়া বেশি দিয়ে। তাই, দেশ হারাচ্ছে রেমিট্যান্স। পকেটে ভারী হচ্ছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের।


এজন্য অনেকেই ডিজিটাল হুন্ডি বা বিকাশে টাকা পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। এজন্য প্রতি ৫ হাজারে খরচ করতে হয় বাড়তি ৩০০ টাকা। এ টাকা দালালের পকেটে যায়। অধিকাংশ প্রবাসী বলছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি এখানে বাণিজ্যিক ব্যাংক চালু করে এবং মালদ্বীপের রুপিয়ায় রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা করে, তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এতে মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স যাবে বেশি। মালদ্বীপ প্রবাসী নিম্ন আয়ের বাংলাদেশিরা এর সুফল পাবেন।অভিবাসীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব মালদ্বীপ (সিবিএম) থেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশে ৫০০ ডলার সমমানের রুপিয়া পাঠানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ডলার সংকটের কারণে জুলাই মাস থেকে সে সুযোগে ৩০০ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগস্ট মাসে ৩০০ থেকে কমিয়ে ২৫০ ডলার করা হয়েছে। প্রতিদিন বাংলাদেশি ২০ জন ও শ্রীলঙ্কান ২০ জনকে রুপিয়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ সুযোগ আরও বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।


ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠাতে আসা কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের অন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ছিল। সিবিএম যখন রুপিয়ার মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ দেয়, তখন সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে সিবিএম ব্যাংক থেকে লেনদেন শুরু করি। কিন্তু, এখন প্রতিদিন মাত্র ২০ জন প্রবাসীকে টোকেন নাম্বার দিচ্ছে। এটি আবার আগের মতো করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকেও মালদ্বীপ সরকারের মতো এ ধরনের ব্যাংকিং উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মালদ্বীপ থেকে বৈধ পথে প্রবাসীরা ২ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার ডলার দেশে পাঠান, যা পরের অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে। মালদ্বীপ প্রবাসীরা যদি বৈধ পথে রুপিয়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন, এটি তিন গুণ হবে বলে আশা করা যায়।
মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরকারি বিনিময়মূল্যে ডলার প্রদান বা রুপিয়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশটির অর্থমন্ত্রীর কাছে গত বছর অনুরোধ জানানো হয়েছে।


পাশাপাশি দেশটিতে থাকা পরিচয়পত্রহীন (আনডকুমেন্টেড) প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে সহযোগিতা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আমীরের সঙ্গে তার মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এই অনুরোধ জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া, তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঠিক বেতন রশিদ দেওয়াসহ ডলারে বেতন পরিশোধের অনুরোধ জানান। দুই দেশের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা খোলার জন্য মালদ্বীপ সরকারকে অনুরোধ জানান হাইকমিশনার। মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশি কর্মীদের নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার প্রশংসা করে এ বিষয়ে তার সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।


এ সময় মালদ্বীপের অর্থ প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব ও চ্যান্সারি প্রধান মো. সোহেল পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।


মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য মালদ্বীপের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, দীর্ঘদিনেও মালদ্বীপের সঙ্গে একটি বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।


এদিকে, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের লোক নিচ্ছে না মালদ্বীপ। এর ফলে কোম্পানিগুলো মাসে ৩০০ ডলার বেতনেও লোক খুঁজে পাচ্ছে না। অন্য দেশ থেকে কর্মীরা আসছেন। মালদ্বীপের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হলে এবং সে দেশে বাংলাদেশের ব্যাংকের শাখা চালু হলে রেমিট্যান্স আহরণ বাড়বে।


মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে ও রিসোর্ট গুলোথেকে অনেক প্রবাসী চাইলে ও বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেনা, বাংলাদেশ সরকার কিনবা বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি ট্রান্সফার গুলো যদি মালদ্বীপের দ্বীপে ও রিসোর্ট গুলোতে ব্যাংকের শাখা চালু করে অনেক বেশি রেমিট্যান্স যাবে মালদ্বীপ থেকে, মালদ্বীপ প্রবাসীরা এইটাই মনে করেন।


২০২১ সালের ডিসেম্বরে মালদ্বীপ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বর্তমানে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন, তা সমাধানে সরকার ব্যবস্থা নেবে। মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে, এখনো এর কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।


দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সংযোগ জোরদারে সম্মত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে দুই দেশের আলোচনায় ঐক্যমত হয়েছিল। এরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ বিমান মালদ্বীপ রুটে চলাচল করলে প্রবাসীদের দেশে আসা যাওয়ার ভোগান্তি আরও কমবে।