দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। নাসিরনগরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের দাবিতে উত্তাল সড়ক — ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ন্যায্যতার মশাল জ্বালালো তরুণেরা - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Monday, 10 November 2025

নাসিরনগরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের দাবিতে উত্তাল সড়ক — ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ন্যায্যতার মশাল জ্বালালো তরুণেরা


জহির শাহ্ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এখন আর কেবল এক শান্ত উপজেলা নয়—এ যেন ন্যায্যতার এক দাবানল, যা জ্বালিয়েছে তরুণ প্রজন্মের অদম্য ক্ষোভ। ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ILST) শত শত শিক্ষার্থী রোববার (৯ নভেম্বর) সকালে সরাইল–নাসিরনগর–লাখাই আঞ্চলিক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। মুহূর্তেই থমকে যায় যানবাহন, স্তব্ধ হয়ে পড়ে জনজীবন—যেন পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেমে যায় তাদের ন্যায্যতার শ্লোগানে।


অবরোধের মূল দাবি ছিল একটাই—নতুন নিয়োগবিধিতে ডিপ্লোমা ইন লাইভস্টক সায়েন্স ডিগ্রিধারীদের উপযুক্ত পদ সংরক্ষণ। চার বছরব্যাপী কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত এই ডিগ্রি আজ সরকারি চাকরিতে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।


শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা যারা ফিড ম্যানেজমেন্ট, পশুর ব্রিডিং, ভ্যাকসিনেশন, এমনকি ফার্ম-লেভেল টেকনোলজিতে প্রশিক্ষিত—তাদের বাদ দিয়ে অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটি শুধু বৈষম্য নয়, পেশাগতভাবে আমাদের অস্বীকার করা।”


এ সময় সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় অন্তহীন যানজট। দুই পাশে থেমে থাকে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা; রোদে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত যাত্রী। তবু শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ক্ষোভ থামে না—“অধিকার ছাড়া উন্নয়ন নয়”, “লাইভস্টক ডিগ্রিকে মর্যাদা দাও”—এমন সব স্লোগানে মুখর থাকে আঞ্চলিক সড়ক।


স্থানীয়রা জানান, শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন কেউ কেউ প্রশাসনের নীরবতার সমালোচনা শুরু করে। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাহেল আহমেদ ও ওসি মকছুদ আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ দুই ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করা হয়।


একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা রাস্তা বন্ধ করতে চাইনি। কিন্তু বারবার দরজা নক করে যখন কেউ সাড়া দেয় না, তখন প্রতিবাদই হয়ে ওঠে একমাত্র ভাষা।”


আরেকজন যোগ করেন, “লাইভস্টক খাত দেশের প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থার মূলভিত্তি। অথচ যারা এই খাতকে টিকিয়ে রাখে, সেই ডিপ্লোমাধারীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে—এটা কেবল অন্যায় নয়, এটি ভবিষ্যৎ কৃষি অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।”


উল্লেখ্য, সারাদেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৮টি আইএলএসটি ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে প্রতিবছর শত শত শিক্ষার্থী আধুনিক পশুপালন প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়। কিন্তু নিয়োগনীতির অস্পষ্টতায় তারা কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যাচ্ছে।


নাসিরনগরের এক শিক্ষক বলেন, “এই তরুণদের ক্ষোভকে আমরা হালকাভাবে নিতে পারি না। তারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ শক্তি। তাদের অবমূল্যায়ন মানে দেশের পশুপালন খাতের দুর্বলতা।”


প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের দাবি উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।


তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চোখে এখনো জ্বলে প্রতিবাদের আগুন। তারা স্পষ্ট করে বলেছে, “এটা সাময়িক বিরতি মাত্র। দাবি আদায় না হলে সারাদেশের আইএলএসটি ক্যাম্পাসে একযোগে আন্দোলন শুরু হবে।”


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ জানে—এই জেলার ইতিহাসে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে থাকেনি। নাসিরনগরের শিক্ষার্থীরা সেই ঐতিহ্যই নতুনভাবে লিখছে—খড়গ নয়, কলম ও কণ্ঠ দিয়ে।


কারণ, তাদের এই বিক্ষোভ কেবল একটি সড়ক অবরোধ নয়—এটি এক প্রজন্মের আত্মসম্মানের সংগ্রাম, যেখানে নীরবতা মানে পরাজয়, আর প্রতিবাদ মানেই জীবনের দাবি।