জহির শাহ্ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তজুড়ে চোরাচালান কার্যক্রম নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্ত পেরিয়ে নানা ধরনের ভারতীয় পণ্য অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। এতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সীমান্তভিত্তিক কয়েকটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট, যারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় তরুণদের ব্যবহার করছে ‘বহনকারী’ হিসেবে।
সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সংস্থাটির দাবি, তারা প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক, ভারতীয় পণ্য ও চোরাই মাল জব্দ করছে। বিজিবি বলছে, চোরাচালান রোধে সীমান্তে নজরদারি আগের চেয়ে আরও জোরদার করা হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত পাচার হচ্ছে ভারতীয় মাদক, গরুর মাংস, মোবাইলের ডিসপ্লে, চশমা, ক্যান্সারের ওষুধ, এমনকি খাদ্যপণ্য ফুচকাও। মৌসুম ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্যের ধরন পরিবর্তন হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন,
> “চোরাচালানকারীরা সাধারণত অল্পবয়সী ছেলেদের ব্যবহার করে, কারণ তারা সীমান্ত এলাকার প্রতিটি গলি ও রাস্তা চেনে। যখন আমাদের টহল দল অভিযান চালায়, তখন তারা পণ্য ফেলে পালিয়ে যায়। তবুও আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং অনেক চালান জব্দ করতে পারছি।”
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের ধর্মগড় সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি মাদক ও চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এই সময়ে ৪৮ জন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন,
> “কোনোভাবেই অবৈধ পণ্য বা মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনের সময় যাতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে, সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩১ কিলোমিটার এলাকায় দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়ন, আর বাকি ৪৬ কিলোমিটার এলাকার দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়ন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত অঞ্চলের বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও ভারতের সঙ্গে পণ্যের মূল্য পার্থক্যই চোরাচালানের প্রধান কারণ। তবে তারা মনে করেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও বিজিবির নিয়মিত অভিযানে এ প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
